ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বগুড়ায় ধান কাটা শ্রমিকের সংকট, পানিতে ভাসছে পাকা ধান

বগুড়ায় ধান কাটা শ্রমিকের সংকট, পানিতে ভাসছে পাকা ধান। ছবি: এনসিএন
বগুড়ায় ধান কাটা শ্রমিকের সংকট, পানিতে ভাসছে পাকা ধান। ছবি: এনসিএন

বগুড়া, ১৫ মে ২০২২: ঘুর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে গত কয়েকদিন বগুড়ায় বৃষ্টিতে বোরা পাকা ধান ক্ষেতের ফসল পানিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। বাম্পার ফলন ঘরে তোলার কথা থাকলেও টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উঠতি বোরোর ফলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবুও দমে যায়নি কৃষক। ধান কাটা শ্রমিক সংকটে পড়ে গৃহস্থ পরিবারের সদস্য নিয়ে নিজের জমির ধান নিজেরাই কাটতে শুরু ।

এদিকে এক মন ধানের দামে একজন শ্রমিক সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাও মিলছে না। গত করোনায় ধান কাটা শ্রমিক সংকটের কারনে প্রধান ন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ধান কেটে কৃষকের গলায় তুলে দিয়েছে।এবার শ্রমিকর মহা সংকটের সেই সহযোগিতা ছাড়া ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। এমনটি জানালেন কালিবালাার আনিছার রহমান।

বগুড়া সদরের কালিবালাার আনিছার রহমান আরো জানান, তিনি অটো রিক্সা চালক। তার ১ বিঘা জমির ধান কাটার লোক না পেয়ে সে নিজেই ধান কটে ঘরে তুলছেন। তাছাড়া বিঘাতে এক মনের সমান ধান শ্রমিক মজুরী ছাড়াও দুই বেলা খাবার দিতে অনেক খরচ পড়ে যায়।

ধান কাটা শ্রমিক সংকট থাকায় সময়মত ধান না কাটতে পানিতে ডুবে থাকা ধানের শীষ ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক সংকটে ও বৃষ্টির কারনে কৃষকদেও লোকসানের মুখে পড়ার আশংকা করছেন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এনামুল হক জানান, চলতি বছরে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে শেষ পর্যন্ত মোট আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে চাল আকারে উৎপাদন হওয়ার ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিকটন চাল পাওয়ার কথা। গত বছর চাষ হয়েছিল ১ লাখ ৮৮হাজার ৫১০ হেক্টর। আর চাল আকারে উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ১০ হাজার ৫৯০ মেট্রিক টন। এবছর প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া যাবে ৫ থেকে ৬ টন করে। বগুড়ায় লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই রেকর্ড পরিমান জমিতে বোরো চাষ হয়ে থাকে। এবারও ভালো ফলনে ভালো দামের প্রত্যাশা করছিল চাষীরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগে রকারনে বাম্পার ফলন হওয়া সত্বেও কৃষকদের মধ্যে বৃষ্টিতে হতাশা দেখা দিয়েছে।

বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বোরো চাষি আবু মুসা জানান, ১০ হাজার টাকা খরচে বিঘাপ্রতি ১৮ থেকে ৩০ মন ধান পাওয়া যায়। জানুয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ধান রোপন শেষে এপ্রিল মাসের শেষে ধান কেটে ঘরে তুলতে হয়। কিন্তু এবার ঝড়ো বাতাস ও টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে উঠতি বোরোর ফলন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১০হাজার টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই ও জমির মালিককে বর্গাবাবদ টাকা দেওয়া পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার ২০০ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। আর বর্গাবাবদ ৭ হাজার টাকা বাদ দিয়ে হিসেব করলে প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে একেকজন কৃষকের খরচের পরিমান দাঁড়ায় ১৫ হাজার ২০০ টাকা। অথচ সেই জমি থেকে অশনির বৃষ্টির কারণে সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ১৮ মণহারে ধানের ফলন মিলছে। এই জমি থেকে ২২ মন করে ধান পাওয়ার কথা ছিল।

শেরপুর উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, শুরু থেকে আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকলেও ফসল ঘরে তোলার সময় আবহাওয়া অনুকূলে নেই। অশনির কারণে প্রায় দুই সপ্তাহধরে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে এসব নানা প্রতিকূলতার মাঝেও বসে নেই কৃষক। ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলার প্রানপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন। তবে ধান কাটা শ্রমিক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। আবার কোথাও মিললেও একদল শ্রমিক পাবার জন্য একাধিক কৃষক টানাটানি করছেন। আর এই সুযোগ নিয়ে শ্রমিকরা তাদের ইচ্ছেমাফিক মজুরি নিচ্ছেন। চুক্তি অনুযায়ী বাড়ি থেকে জমির দুরুত্ব বুঝে একবিঘা (৪ জন) জমির ধানকাটা বাবদ ৫ হাজার টাকা এবং দুরের পানিতে ঢুবে থাকা ধানকটতে থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক গুণতে হচ্ছে। পাশাপাশি প্রত্যেককে ২ বেলা খাবার খরচ দিতে হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন জানান, ধান ও চালের মুল্য ভালো পাওয়ায় কৃষক ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আবহাওয়া না ভালো থাকায় কৃষকরা তাড়াতাড়ি তাদের ফলন কৃত ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতি বছরই এই এলাকায় বোরোর বাম্পার ফলন পাওয়া যায়। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক তারা কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে পাকা ধান কাটার জন্য। এবার ঈদের আগেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক দুলাল হোসেন জানান এ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। মোট ধান ৮৫০ টাকা এবং সরু ধান ১১০০ টাকা মন দরে(ভেজা) বিক্রি হচ্ছে । তিনি জানান এই শুকালে ধানের দাম বাড়বে।

এনসিএন/এএ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print