প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৯৫ সালে গাবতলী শহীদ জিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং ২০০১ সালে শহীদ জিয়াউর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তী রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বদলে যায় স্কুল দুটির নাম, যথাক্রমে সুখানপুকুর বন্দর গার্লস হাইস্কুল এবং গাবতলী পূর্বপাড়া হাইস্কুল। তৎকালীন সময়ে দুটি স্কুল কর্তৃপক্ষের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে না জানিয়ে এমনটি করা হয়। নাম পরিবর্তন হলেও বিগত ১৫ বছরে উন্নয়নের কোন ছিটেফোঁটাও লাগেনি স্কুল দুটিতে।
স্কুল দুটি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির শাসনামলে ১৯৯৫ সালে গাবতলী শহীদ জিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং ২০০১ সালে শহীদ জিয়াউর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেলে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি সুখানপুকুর সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী ও পুনর্মিলণীতে দিতে বগুড়ায় আসেন। যোগ দেয়ার পথে সুখানপুকুর এলাকায় জিয়াউর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ফলক চোখে পড়ে। সেদিন সন্ধ্যায় বগুড়া সার্কিট হাউজে মিটিংয়ে অংশ নেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ সহ আরও অনেকে। ওই মিটিংয়ে তৎকালীন গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান ও বগুড়া পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিনেওয়াজ খান রবিন জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুল দুটির নাম পরিবর্তনের বিষয়টি উপস্থাপন করেন। এরপর স্কুল দুটির এমপিও ভুক্তির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন দেয়া হয়। ওই সময় শহীদ জিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম পান্না এবং শহীদ জিয়াউর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফফারকে ডেকে পাঠান তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ। সেসময় তাদেরকে জানান, শহীদ জিয়ার নাম থাকলে বিদ্যালয় দুটির এমপিও ভুক্তি হবে না, তাই নাম পরিবর্তন করতে হবে। এতে তারা সেসময় রাজি হননি। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে শহীদ জিয়াউর রহমান গার্লস হাইস্কুলের নাম সুখানপুকুর বন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং গাবতলী শহীদ জিয়া হাইস্কুলের নাম গাবতলী পূর্বপাড়া হাইস্কুল উল্লেখ করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে বিদ্যালয় দুটির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন ও এনামুল হক নতুন কোন কারণ ছাড়া বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনন করায় রিট করেন। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর দুটি স্কুলের নামকরণ সংক্রান্ত আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট। পরে ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের নাম পরিবর্তন করে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে এ আদেশ দেন তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান। এরপর থেকে নতুন নামে বিদ্যালয়ের কার্য়ক্রম চলতে থাকে।
বিদ্যালয় দুটির খোজ নিয়ে ও স্থানীয়রা জানান, স্কুল দুটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেমন ছিল তেমনই আছে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম থাকায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে। যারফলে সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ারের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নয়ন করা হলেও এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নের জোয়ারের ছিটেফোঁটাও লাগেনি। ২০২১ সালে নাম পরিবর্তন হলেও যেমন ছিল ঠিক তেমনই রয়ে গেছে। জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার জন্য আওয়ামীলীগের নেতার এমনটি করেছেন বলেও অনেকে দাবি করেছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর কাছে শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম পরিবর্তন বিষয় উপস্থাপনকারী বগুড়া পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও তৎকালীন গাবতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রফিনেওয়াজ খান রবিনের সাথে এবিষয়ে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মতামত পাওয়া যায়নি।
গাবতলী পূর্বপাড়া হাইস্কুলের (শহীদ জিয়া উচ্চ বিদ্যালয়) তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এই স্কুলের যা যা দরকার সব দিয়েছি। জায়গা, নগদ টাকাসহ যত কিছু দরকার। শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা পায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতেই স্কুলটি চলছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে স্কুলটি। যার কারণে ১৫ বছরে কোন উন্নয়ন হয়নি। যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও এমপিও ভুক্তির নামে স্কুলটির নাম পরিবর্তন করেছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের লোকজন। শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার জন্য এই কাজটি করা হয়েছিল।
গাবতলী পূর্বপাড়া হাইস্কুলের (শহীদ জিয়া উচ্চ বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষক একেএম পান্না বলেন, ২১ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছি। বিগত ১৫ বছরে কোন উন্নয়ন হয়নি। ২০২০ সালে তৎকালীন সময়ে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহমেদ ও গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহান স্কুলের নাম শহীদ জিয়া পরিবর্তন জন্য ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু আমি রাজি হয়নি। পরে দেখি নাম বদলে গেছে। নাম বদলে স্কুল কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি, এমনি কি জেলা প্রশাসনক কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে দাবি করেন তিনি। আবারও পূর্বের নাম ফিরে পেতে শিক্ষা বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সুখানপুকুর বন্দর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (শহীদ জিয়াউর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) তৎকালীন সভাপতি ও গাবতলী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক নতুন বলেন, স্কুলের নাম পরিবর্তন করায় আমরা হাইকোর্টে রিট করেছিলাম। পরে তা স্থগিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের শুরুতে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বাতিল করে আপিল বিভাগ। মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছে এটি। আর কিছু না। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফফার জানান, কোন অনুমতি বা রেজুলেশন করা হয়নি। অথচ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় স্কুলটির নাম বদলে দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, স্কুল দুটির নাম পরিবর্তনের বিষয়টি আমরা জেনেছি। বিদ্যালয় দুটির কর্তৃপক্ষ আবেদন জানিয়েছেন। আমরা তাদের আবেদন যথাযথ বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি।
