ক্ষমতার জোরে দখল করে নেওয়া এস.আর.বি. ব্রিকস্ নামের একটি ইটভাটা ফেরত পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শহিদুল ইসলাম (৫৮) নামের এক ইউপি চেয়ারম্যান। অভিযোগ গত ৫ আগষ্টের পর থেকে ইটভাটাটি দখলের পাঁয়তারা করছিল রফিকুল (৫০) নামের বিএনপির এক নেতা। এরপর গত ১৩ ডিসেম্বর জোর করে ইট নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সেই আশা পূরণ করেছে তিনি। এখনও তার দখলে আছে ইটভাটাটি। সেখানে দিনে তালা ও রাতে পাহারায় থাকছেন কয়েকজন ব্যক্তি।
ঘটনাটি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের বৈশকূল এলাকায়।
অভিযোগ ওঠা বিএনপি নেতা রফিকুল কান্তা গ্রামের মৃত রহমানের ছেলে। এবং তিনি আমাইড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আর ভূক্তভোগী শহিদুল ইসলাম ওই ইটভাটাটির স্বত্বাধিকারী এবং একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কুন্দন গ্রামের মৃত হুজুর আলীর ছেলে।
ঘটনাটি শুরু গত বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর রাত থেকে। ওই রাতে রফিকুলের ২০১৯ সালের করা মামলায় ওয়ারেন্টমূলে পুলিশ এসে শহিদুল ইসলাম, তার ছেলে ও ভাইসহ চারজনকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের অনুপস্থিতির সুযোগে রফিকুল নামের বিএনপির ওই নেতা শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর সকাল থেকে ভটভটি ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে ইটগুলো নিয়ে যাওয়া শুরু করে। তবে রফিকুলের দাবি করেছিল ইট ভাটাটি তার কাছে বিক্রি করায় তিনি ইটগুলো নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর থেকেই রফিকুলের লোকজন দখলে রেখেছে ইটভাটাটি। গত শনিবার ১৪ ডিসেম্বর রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কয়েকজন ইটভাটাতে অবস্থান নিয়ে আছে। তারা স্বীকার করলেন চেয়ারম্যানের কাছে টাকা পাবো, তাই আমরা দখলে আছি।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, শহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও ইয়াচিন আলী গং’রা পার্টনারে এই ইটভাটা চালাতো। আওয়ামীলীগের সময় শহিদুল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সকল পার্টনারকে মামলায় ফেলে নিজে দখল করে নেয়। হাসিনা সরকার চলে যাওয়ার পর আমরা যদি গার্ড হিসেবে না থাকতাম, তাহলে একটি ইটও পাওয়া যেতনা। তার কপাল ভালো আমরা ইটগুলো পাহারা দিয়ে রাখছি গর্বের সহিত বলেন তিনি। আমরা তার কাছে ২৪ লাখ টাকা পাবো। চেয়ারম্যান কখনও আমাদের সাথে বসতে চায়নি। তাই আমরা দখল করে নিয়েছি।
নিজেকে একজন পার্টনার দাবি করে আরেকজন জানালেন, শহিদুল আমাদের কাউকে ঢুকতে দেয়নি এই ভাটায়। তার সাথে বসতে চাইলেও তিনি কখনও বসেননি। তার কাছ থেকে পাওনা ২৩ লাখ ৫৬হাজার টাকাও ফেরত দেয়নি চেয়ারম্যান। সকল ধরণের কাগজ আমাদের কাছে আছে। এরপর ৫ আগষ্টের পর আমরা এটার দখল নিয়েছি। তারপরও এই ভাটার একটা মূল্য ধরা হয়েছে, চেয়ারম্যান চাইলে আমরা ফেরত দিবো। চেয়ারম্যান আপনাদের টাকা দিলে আপনারা কি করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সে এতোদিন ব্যবসা করেছে, এখন আমরা করবো।
এদিকে রফিকুলের দাবি তিনি ৬০ লাখ টাকায় ইটভাটা কিনে নিয়েছেন। এছাড়া তাদের মধ্যে একজন ইটভাটার মূল্য বাবদ চেয়ারম্যানকে কিছু টাকা ফেরত দিতেও চাইলেন। আর আরেকজনের দাবি তারা ২৪লাখ টাকা পাবেন। এখন একেক জনের একেক রকম মন্তব্য নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
১৫ ডিসেম্বর সকালে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটায় কেউ নেই। অফিসে ঝুলছে তালা। এদিকে নান্দাস এলাকার একটি বাড়ির বাহিরে এখনও সাজানো আছে ইট। সেই ইটের ছবি তুলতে লাগলেই কয়েকজন নারী-পুরুষ বেরিয়ে আসলেন। তাদের মধ্যে একজন হীরা। তিনি বলেন, আমি নাম কইতে পারছিনা। ওই ভাটা থেকে ইট পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার যাওয়া লাগেনি। এখানে ইট পৌঁছে দিয়ে টাকা নিয়ে গেছে।
সকল কাগজপত্র এগিয়ে দেখাচ্ছেন চেয়ারম্যানের ছেলে মামুন হোসেন। তিনি বলেন, আমার বাবা এস.আর.বি ব্রিকস্ এর প্রোপাইটার। বিএনপি নেতা রফিকুল একসময় বাবার সাথে পার্টনারে ব্যবসা করতো। এরপর রফিকুল তার অংশ বিক্রি করে দেয়। কিন্তু ৫আগষ্টের পর সে পুরো ইটভাটা দখলের পাঁয়তারা করতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে রফিকুলের করা মিথ্যে মামলায় আমরা গ্রেপ্তার হলে সেই সুযোগে ইট নিয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ থেকে দখলে নেওয়ার ষোলকলা পুরণ করেছে। আমরা কোথাও কোনো বিচার পাচ্ছিনা। আপনাদের মাধ্যমে এর একটা স্থায়ী সমাধার চাই।
একইভাবে বিচার চাইলেন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। তারা জানালেন, বিএনপির ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রফিকুল আমার ইটভাটা পুরোপুরিভাবে তার দখলে রাখার পাঁয়তারা করছে। সে সম্পন্ন টাকা নিয়ে চলে গেছে। তারপরও দখলে নিয়ে রেখেছে। আমরা তার ভয়ে সেখানে যেতে পারছিনা। এছাড়া একের পর এক হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। সঠিক বিচার পাচ্ছিনা।
জানতে চাইলে আমাইড় ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল মুঠোফোনে বলেন, ওই জমিটা আমার। আর শহিদুল আমার উপর অনেক অত্যাচার করে ভাটাটি দখলে নিয়েছিল। আপনি এর আগে বলেছিলেন ৬০লাখ টাকায় কিনে নিয়েছেন এবং আপনার সহযোগীদের মন্তব্য আলাদা আলাদা এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। সরাসির গিয়ে কথা বলতে বলেন। তবে তিনি বিএনপির ক্ষমতা দেখানোর কথা অস্বীকার করলেও শহিদুলের কাছে যেসব কাগজ আছে এবং যেমন করেছে, তিনিও সে রকম করবেন এবং কাগজ বানানোর ইঙ্গিত দিলেন বিএনপির এই নেতা।
জানতে চাইলে পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আক্কাস আলী মুঠোফোনে বলেন, বিএনপির নাম ভেঙ্গে কিছু করার সুযোগ নেই। ওই বিষয়টি থানা দেখবে। আপনি থানাকে বলেন। সাংগঠনিকভাবে আপনাদের করার কিছু আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি। এছাড়া তিনি আবারও প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন।
পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ মো: এনায়েতুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ওই ইটভাটার মালিকানা নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের বিরোধ। আমরা অনেক চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারিনি। তবে ওখানে যেন আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয় সেবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
