নওগাঁর ধামইরহাটে চিরকুট লিখে কৃষক দলের এক ওয়ার্ড সভাপতি বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
ওই নেতার নাম মামুনুর রশীদ (৪৫)। তিনি উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন। এবং ওই ওয়ার্ডের ভাতকুন্ডু এলাকার মৃত মহির উদ্দীনের ছেলে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধায় নিহতের স্ত্রী খাদিজা বেগম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি ও কৃষক দলের নেতাদের দায়ী করে বিষপান করে অসুস্থ হন বলে দাবি পরিবারের।
চিরকুটে অশুদ্ধ ও অস্পষ্টভাবে লেখা আছে, কোথাই কাহাকে দিতে হবে, শামিমের কথামত তার হবে, শামিম বুঝে দেয়। শামিমের কারণে এই টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন আমার মৃত ছাড়া কি উপাই আছে। এরপর নিচে কয়েক জনের নাম ও টাকার পরিমাণ লেখা আছে। এছাড়া নামের পাশে মোবাইল নাম্বারও দেওয়া আছে। সেখানে উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম, পৌর কৃষক দলের সভাপতি আরমান হোসেন রিপন, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও বাবুল ভাইকে বিভিন্ন সময় ১০ ও ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছি। হাওলাত বাবদও টাকা নিয়েছে বলে চিরকুটে লেখা আছে। এছাড়া লেখা আছে পান, সিগারেট এবং চা এর হিসাব করিনি। এবং তারা সকলে দায়ী বলে চিরকুটে লেখা আছে।
স্বামীর মৃত্যুর বিচার চেয়ে স্ত্রী খাদিজা বলেন, গত ১৭ তারিখ সোমবার রাত সাড়ে ১১টার সময় বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে (খিরা) ফসলের মাঠে আমার স্বামীকে পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। কর্তব্যরত চিকিৎসক জয়পুরহাট সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করেন। শরীরের অবনতি ঘটলে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মামুন বিষ পান করায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। বুধবার বেলা ১১টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
স্থানীয়রা জানান, বরেন্দ্রর ডিপ টিউবওয়েলের নিয়োগের কথা বলে কে বা কারা ৭০ হাজার টাকা নিয়েছে। গত ১২ তারিখ বরেন্দ্রর নিয়োগ হওয়ার কথা থাকলেও তা না হওয়ার কারণে মন খারাপ ছিল নিহত মামুনের। সম্ভবত এ কারণেই সে বিষ পান করেছে। এ বিষয়ে একটি চিরকুট লিখে গেছে সে। চিরকুটের সূত্র ধরে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রæয়ারি) দুপুরের দিকে জানতে চাইলে চিরকুটে অভিযোগ ওঠা ধামইরহাট উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমার এবিষয়ে জানা নেই। আমি এলাকায় ছিলাম না। গতকাল এসে বিষয়টি শুনতে পাই। কারা, কি জন্য এসব করছে তা জানা নেই। তবে বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
একইদিন জানতে চাওয়া হয় চিরকুটে সরাসরি অভিযোগ তোলা শামিমের কাছে। তিনি নিজেকে বিএনপির সাথে জড়িত দাবি করে মুঠোফোনে বলেন, মামুন ভাইয়ের সাথে আমার ৭৫ হাজার টাকার একটা লেনদেন ছিল। আমার এক ভাইয়ের ব্যাংক থেকে লোন বাবদ মামুন ভাইকে দলিলসহ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। যেটা তার পরিবার জানে। লোন করে দিতে না পারলে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে কখন কাকে টাকা দিয়েছে আমি জানিনা। তার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি চিঠিতে কেন আমার নাম লিখে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে গেল এটা আমার জানা নেই। এছাড়া ডিপ টিউবওয়েলের নিয়োগ ছাড়ার পর তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। এখন কি বিষয়ে কাকে টাকা-পয়সা দিয়েছে, সেটা আমি কিছু জানিনা ভাই।
জানতে চাইলে ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাইসুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ওই ব্যক্তি বগুড়া মেডিকেলে মৃত্যুবরণ করেছেন। যার নাম আমাকে বলা হয়েছে আমিনুর রশিদ। আমি আইনগত প্রক্রিয়ার জন্য তাদেরকে বলেছি। আর চিরকুটের বিষয়ে পরিবার থেকে এখনও কেউ কোন অভিযোগ করেনি। পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
