ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

“চাকরি ছেড়ে হয়েছেন রঙিন আমের চাষি; স্বপ্ন বুনছেন বাগানে”

চাকরি ছেড়ে এসে হয়েছেন আমচাষি, করছেন চিয়াং মাই, কিং অফ চাকাপাত, তাইওয়ান রেড, আমেরিকান পাল মার, মিয়া জাকি বা সূর্য ডিম। পাশাপাশি কাটিমন ও ব্যানানা।

চাকরির নির্ধারিত সময় আর চার দেওয়ালের বন্ধন পেছনে ফেলে ভিন্ন কিছু করার সাহস দেখিয়েছেন পলাশ হোসেন নামের এক যুবক। ৫-৬ বছর আগে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন তিনি পুরোদস্তর একজন কৃষক।

নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার ভাতসাইল গ্রামের পলাশ হোসেন আম বাগান করে তরুন উদ্যোগক্তা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছেন প্রায় পাঁচ বছর আগে। প্রথমে দেশি জাতের আম চাষ শুরু করেলেও বর্তমানে দেশী জাতের পাশাপাশি বিদেশী নানান রঙ্গিন জাতের আম চাষ করছেন। বিভিন্ন জাতের রঙিন আম চাষ করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। লাল, হলুদ, বেগুনী রঙের আমও দেখা যায়।

তার বিশাল বড় বাগানে ছোট ছোট গাছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলে আছে এসব রঙিন আম। মূলত আমেরিকা, থাইল্যান্ড,জাপান ও চায়না জাতের তাইওয়ান রেড, আমেরিকার পালমার, চিআংমাই, কিং অফ চাকাপাত, মিয়াজাকি, ন্যামড কমাই, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, আম্বিকা সহ ১৭ জাতের রঙিন আম চাষ করেছেন তিনি।

তবে বিদেশী জাতের আম রপ্তানীতে তেমন কোন বিশেষ সুবিধা না থাকায় আমগুলো নিয়ে বিপাকের মধ্যে পড়তে হয় বলে জানান তিনি।

এখন তার বাগানে বাড়তি কাজ করে সাজ্জু ও হোসেন নামের দুই জন মাসিক যা বেতন পেত সেটা দিয়ে ভালোই চলছে তাদের সংসার।

পলাশ হোসেন বলেন,“ চাকরি করার পাশাপাশি প্রথমে ইউটিউব দেখে আমের বিদেশী জাতের রঙিন চাষে আগ্রহ হয়। এরপর ছোট পরিসরে কয়েকটি বিদেশী জাতের চারা রোপন করি। এরপর প্রায় ৫ একর জমিতে দেশী ও বিদেশী ১৭ জাতের রঙিন আমের চারা রোপন করি। পরে চাকরি ছেড়ে দেই। এ মৌসুমে দেশের বাহিরে আম রপ্তানি করার আশা আছে। ১০ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছি। এছাড়াও বারো মাসি কাঠাল, কমলা, মাল্টার প্রজেক্ট রয়েছে এই বাগানে”।

বর্তমানে বাগানে রঙিন আম দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন লোকজন। আম থেকে প্রতি মৌসুমে কয়েক লাখ টাকার উপরে আয় করেন তিনি। আম বাগান কে কেন্দ্র করে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েকজন যুবকের। তাই আশেপাশের কয়েকজন বেকার যুবক তার দেখানো পথেই হাঁটছেন এখন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলছে, পলাশ হোসেন প্রতি বছর দেশী জাতের আমের পাশাপাশি সম্প্রতি বিদেশী জাতের আম উৎপাদন শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তার আম বাগানে নতুন জাতের আম বাজারে আসতে শুরু হয়েছে। রঙিন আম দেখতে খুব ভালো লাগছে। আর আম চাষিদের আম এক্সপোর্ট এর জন্য এবছর থেকে রপ্তানি যোগ্য আম উৎপাদনের জন্য অ্যাপ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। সেখান থেকে তারা সরাসরি ব্যায়ারদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে আম বিক্রি করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে কৃষিকর্মকর্তারা সব সময় আম চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিল। পলাশের মতো যুবকরা এভাবে কৃষিতে এগিয়ে আসলে একদিকে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়”। চাকরি নয়, স্বপ্ন বেছে নিয়েছেন পলাশ। আর সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবতা। যা বদলে দিচ্ছে বদলগাছীর কৃষি-অর্থনীতি ও যুবকদের ভবিষ্যৎ।

চলতি বছর বদলগাছি উপজেলায় ২০ হেক্টর বেড়ে ৫৫০ হেক্টর জমিতে বেশি আম উৎপাদন করছেন চাষিরা। যার ফলন ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২৫-৩০ মে:টন এবং বাণিজ্য হবে প্রায় ৯০-১০০ কোটি টাকা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print