ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে; ঝুঁকি এড়াতে তৎপর প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড

Oplus_16777216
Oplus_16777216

লাগাতার ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে নওগাঁর নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্য আত্রাই নদীর দুটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

তাই ঝুঁকি এড়াতে দিনে ও রাতে নদী সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং জরুরী অবস্থায় করনীয় বিষয়ে স্থানীয়দের সচেতন করাসহ নানা বিষয়ে তৎপরতা চলমান রেখেছেন রাণীনগরের ইউএনও এবং নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

এদিকে শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে জেলার মান্দা উপজেলার কসব ইউনিয়নের তালপাতিলা নামক স্থানে কয়েক সেন্টিমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে আত্রাই নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকেছে। এতে কয়েকশ পরিবার হয়ে পড়েন পানি বন্দী।

তবে এখন পর্যন্ত কোথাও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল।

অপরদিকে জরুরী অবস্থা মোকাবেলা করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা আছে বলে জানিয়েছেন রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসান।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা, লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার ফলে জেলার আত্রাই উপজেলার পতিসর-সমসপাড়া পাকারাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে লাগানো ধান। রাস্তার উপর কোমর পানি হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকায় পানি বৃদ্ধির ফলে নিন্মভূমি বাহাদুরপুর, দমদত্তবাড়িয়া, হিঙ্গুলকান্দি, জগন্নাথপুরসহ কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। আর কোন বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুতই নামতে শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল।

প্রবীর কুমার পাল জানান, নওগাঁ জেলার আত্রাই নদীর উজানে শিমুলতলী, মহাদেবপুর ও জোতবাজার পয়েন্ট পানি সমতল কমতে শুরু করেছে এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ

বাঁধের কোন অংশ ভেঙ্গে যায় নি। আর মান্দায় ভেঙে যাওয়া বাঁধটি আমাদের পানি উন্নয়নের বোর্ডের না। তারপরও সেখানে আমাদের লোক গিয়েছে। আমরা যথাযথভাবে নদী রক্ষা বাঁধগুলো মনিটরিং করছি। সর্বক্ষণিক সরেজমিনে গিয়ে তদারকি করছি। আশা করি কোন স্থানে সমস্যা হবে না।

তিনি জানান, শনিবার বিকেল ৩ টার সময় আত্রাই নদীর পানি মান্দা উপজেলার জোত বাজার পয়েন্টে বিপদ সীমার ২৯ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এবং শিমুলতলী পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ১৯২ সেন্টিমিটার, মহাদেবপুর পয়েন্টে বিপদ সীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ছোট যমুনা নদীর লিটন ব্রীজ পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাই সম্প্রতি উজানে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি তেমন একটা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। উজানে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে এবং আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে দ্রুতই নদীর পানি কমতে শুরু করবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই আত্রাই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ রসুলপুর, সদুপুর, লালুয়া, বেওলা, নন্দনালী, জগদাস, শিকারপুর, দুবাই, গুরনৈ এবং রাণীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ি, কৃষ্ণপুর, ঘোষগ্রামসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো দিনে এবং রাতে পরিদর্শন

করা হচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রাকিবুল হাসানের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডও সব সময় উপজেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। তবে নদীর তীরবর্তী ও কিছু কিছু নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করায় সাময়িক ভাবে কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। আগামীতে যদি ভারী বৃষ্টিপাত আর না হয় এবং উজান থেকে পানি না আসে, তাহলে নওগাঁয় বাঁধ ভেঙ্গে বন্যা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাকিবুল হাসান জানান, জেলা প্রশাসক স্যারের সার্বিক নিদের্শনা মোতাবেক সব সময়ই আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন অব্যাহত রাখা হয়েছে। ইতিপূর্বে রাণীনগর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ

বেরিবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। তাই রাণীনগর উপজেলায় ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধিতে তেমন একটা ভয় নেই। এছাড়া আত্রাই উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোও সব সময় পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বাত্মকভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষার্থে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে একটি করে দল গঠন করা হয়েছে। অর্থাৎ দুই উপজেলাতেই পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষার্থে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বদ্ধ পরিকর। দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন সর্বদা তৎপর রয়েছে। এমতাবস্থায় তিনি দুই উপজেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print