সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫ ১:৫৮ এএম

স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, কিন্তু অদৃশ্য শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে: তারেক রহমান

Oplus_16908288
Oplus_16908288

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘স্বৈচারাচারী সরকারের পতনের কয়েকদিন পরেই আমি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সঙ্গে সভা করে বলেছিলাম, স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, কিন্তু অদৃশ্য শক্তি দিনে দিনে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সেই কথা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আজ দুটি শপথ নিতে হবে- দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে, ব্যক্তিগতভাবে কেউ যেন দলকে ব্যবহার করতে না পারে। আর সবাইকে সচেতন থাকতে হবে, কেউ যেন বিএনপির নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে না পারে। জনগণের মাঝে যেন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে।’

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে আজ শনিবার বিকেলে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেকগুলো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাবের প্রায় ৯৫ ভাগ সংস্কার প্রস্তাব আরও আড়াই বছর আগে বিএনপি দিয়েছে। সংস্কার কমিশনে বিভিন্ন দল তাদের মতামত দিয়েছে। বিএপিও মতামত দিয়েছে। কোনো কোনো বিষয়ে হয়তো বিএনপির মতপার্থক্য রয়েছে। তবে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের প্রশ্নে বিএনপি কাজ করতে চায়।’

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যে নির্বাচন হবে, তখন আজকের সম্মেলনের মত ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের পক্ষে রায় আনতে সক্ষম হবো। ৩১ দফার পক্ষে রায় আনতে হলে মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, ঘরে বসে থাকার সময় নেই। সামনে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণের রায়ের ভিত্তিতে সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাহলে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবে।

তারেক রহমান বলেন, ‘ভবিষ্যৎ সন্তানদের শিক্ষার জন্য যা করা প্রয়োজন, নারীদের অধিকার, তাদের স্বাবলম্বী করার জন্য যা করা প্রয়োজন, তা করা হবে। কর্মসংস্থানের জন্য, দেশে হোক বিদেশে হোক, শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’ তিনি সম্মেলন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

দীর্ঘ নয় বছর পর আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্মেলন উদ্বোধন করেন। জেলা কমিটির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে লন্ডন থেকে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান ৪০ মিনিট বক্তৃতা করেন।

সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তারেক রহমান যে ৩১ দফা দিয়েছেন, তাতেই দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলা হয়েছে। জনগণের কাছে ৩১ দফা নিয়ে যেতে হবে। বিগত দিনে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে আপনারা আন্দোলন করেছেন, আগামী নির্বাচনটাও সেভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন, দলের কেউ যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কাজেই নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব হাবিবুন-নবী খান সোহেল ও সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন ও আবু ওয়াহাব আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক রাষ্ট্রদূত লায়লা বেগমসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

এর আগে জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর। শনিবারের সম্মেলন উপলক্ষে শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে বিশাল মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরি করা হয়। স্টেডিয়ামসহ পুরো শহরেই প্রচুর মাইক লাগানো হয়। স্টেডিয়াম পর্যন্ত শহরের প্রতিটি রাস্তায় স্থানীয় নেতাদের যার যার ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকগুলো তোরণ নির্মাণ করা হয়। সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রতিটি ইউনিট থেকেই মিছিল এসে যোগ দেয় সম্মেলনে। সম্মেলন চালাকালে কয়েক দফা মুষলধারায় বৃষ্টি হয়েছে।

 

সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠনের উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি ছিল জাতীয় নির্বাচনের আমেজ। বিভিন্ন সম্ভাব্য প্রার্থীর লোকজন তাদের নামে শ্লোগান দেন। অনেকের হাতে ছিল আঁটি বাঁধা ধানের শিষ। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পুরাতন স্টেডিয়ামেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

২১টি ইউনিটের ২ হাজার ৯০ জন কাউন্সিলর সম্মেলনের ভোটার। সভাপতি পদে দুইজন আর সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি শরীফুল আলম ও সহ-সভাপতি রুহুল হোসাইন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী আছেন জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের পিপি এএম সাজ্জাদুল হক ও নিকলী উপজেলা বিএনপির সদস্য শফিকুল আলম রাজন। প্রত্যেককে নির্বাচনী প্রতীকও বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহবায়ক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান।

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print