ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৭:১৯ পূর্বাহ্ণ

গুম ফেরত ছাত্রনেতা শেখ রিচি হলেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি হলেন গুম ফেরত ছাত্রনেতা শেখ শাকির ইবনে সাইখ রিচি। গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত ছাত্রদলের দলীয় প্যাডে এই কমিটি দেওয়া হয়। 

কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক গালিব আল মুগনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাইসুল ইসলাম ধ্রুবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

জানা যায়, নব-গঠিত কমিটিতে শজিমেক ছাত্রদলের সভাপতি শেখ শাকির ইবনে সাইখ রিচি গত জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র রাজনীতি করায় গত ২০২৩ সালে গুমও হতে হয় এই ছাত্রনেতাকে।

নবগঠিত কমিটির সভাপতি শেখ শাকির ইবনে সাইখ রিচি ‘নর্থ ক্যাপিটাল নিউজ’কে বলেন, ‘আমাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত করায় আমি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে প্রথম বর্ষ থেকেই। মেডিকেলে ভর্তির পর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ত্রাসের রাজনীতি দেখে এবং সারা দেশের গুম-খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আমার বিবেককে ভাবিয়ে তোলে। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিতে যুক্ত হই। গুম খুনের কারণে র‍্যাব এর উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আসার পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ সহ ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হয়। তারেক রহমানের বক্তব্যগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তার মন্তব্য আমার খুব ভালো লেগেছিল। তিনি বলেছিলেন ৫৭ জন আর্মি অফিসারকে হত্যার জন্য ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনাকে ৫৭ বার ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। তারপর গত ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট গুম খুনের প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিল, ১৯ জুন বগুড়ায় তারুণ্যের মহাসমাবেশ, ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া টু রাজশাহী রোডমার্চ, ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে স্বৈরাচারের পতনের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশের কর্মসূচিসহ ফ্যাসিবিরোধী কর্মসূচিগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। দীর্ঘ ১৪ বছর বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ছাত্রদলের কোনো কমিটি ছিল না। পূর্ববর্তী কমিটিতে যারা ছিলেন তারা অনেক আগেই পাস করে নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। তাদের সাথে কোনো যোগাযোগও তখন গড়ে ওঠেনি। তখন জেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে ফ্যাসি বিরোধী কর্মসূচি গুলোতে অংশগ্রহণ করি। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের কর্মসূচি থেকে ফেরার পর স্বৈরাচারী হাসিনার গণগ্রেপ্তার কার্যক্রম শুরু হয়। তখন মেডিকেল থেকে সরে নিজের বাসায় অবস্থান নিই। তারপর আমাকে লোকেশন ট্র্যাকিং করে সেখান থেকে গুম করে খুনি হাসিনার জল্লাদ বাহিনী। তারপর হাত, পা, চোখ বেঁধে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। তিনদিন পর আল্লাহর অশেষ দয়ায় আমাকে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে রেখে যায় হাসিনার বিনা ভোটের খুনি গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের জল্লাদ বাহিনী। আমি বেঁচে ফিরতে পারব এ আশাটুকুও ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে গুমের খবরে আমার বাবা দুশ্চিন্তায় স্ট্রোক করেন। আমার মা কান্নাকাটি করে অজ্ঞান হয়ে যান। আমি অসুস্থ বাবাকে মেডিকেলে ভর্তি করালে সেখানেও খুনি এমপির গুন্ডাবাহিনী আমার গতিবিধির অনুসরণ করতো। আমি মেডিকেল থেকে কেনাকাটার জন্য বের হলে একবার বাস এবং আরেকবার ট্রাক চাপায় মারার চেষ্টা করে গুন্ডাবাহিনী। আমার মেডিকেলেও তাদের বেশ কয়েকজনকে চাকরিতে নিয়োগ করে। ইতোপূর্বে সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সহ তার বাহিনীরা অনেকগুলো ক্লুলেস হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে যার উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাদের বিচার সম্পন্ন করা যায়নি। জুলাই আন্দোলনের সময় এজন্য আমি মারা যাবো এটা ভেবেই পরিবারের জন্য চিঠি লিখে বাসায় রেখে বের হয়েছিলাম। আন্দোলন সফল হলে সেই গুপ্ত হত্যাকারীরা গা-ঢাকা দেয়।’

তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্যে অদৃশ্য শক্তির কথা বারবার বলেছেন। আমি এই ধরনের অদৃশ্য শক্তির ভুক্তভোগী। আগামীতে হায়াতে বেঁচে থাকলে দলের জন্য এবং দেশের জন্য আরো কল্যাণকর কাজে যুক্ত হতে চাই। যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করার জন্য এবং স্বজনপ্রীতি রোধ করার জন্য ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিম গঠনের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাইয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাচ্ছি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print