অক্টোবর ১৫, ২০২৫ ৩:৩৭ এএম

শিক্ষককে অপহরণ করে নিয়োগ পত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ

নওগাঁর বদলগাছীতে প্রধান শিক্ষককে অপহরণ করে জোরপূর্বক অবৈধ নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সভাপতি ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শিক্ষক সমাজ, স্থানীয় ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ বামনপাড়া টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এর সুপারিনটেনডেন্ট মো. হুমায়ুন রেজা খানকে অপহরণ করে বাসায় নিয়ে গিয়ে তিন কর্মচারীর নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি বশির উদ্দিন ও তার ছেলে বুলেট সহ আরও ৫-৬ জন ব্যক্তি।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সুপারিন্টেন্ডেন্ট গত বৃহস্পতিবার ৯ অক্টোবর রাতে বদলগাছী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই সাথে মৌখিক ভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ইউএনও কেও বিষয়টি অবগত করেছেন।

সোমবার ১৩ অক্টোবর দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সুপারিনটেনডেন্ট হুমায়ুন রেজা খান বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। উপজেলার সন্ন্যাসতলা এলাকায় পৌঁছামাত্র প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি বশির উদ্দিন এবং তার ছেলে মো. বুলেট হোসেন, চক কামাল এলাকার মো. হাবিব হোসেনসহ আরও ৫-৬ জন মিলে তার পথ রোধ করে তাকে জোরপূর্বক অটোচার্জার গাড়িতে তুলে জয়পুরহাট সদরে সবুজনগড় এলাকার সভাপতির বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বিদ্যালয়ের তিনজন কর্মচারী নৈশ্য প্রহরী বাধন হোসেন, আয়া পদে ফারজানা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে জালাল হোসেনের নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ শেষ করে রেলস্টেশন এলাকায় ছেড়ে দিয়ে যায়।

এ ঘটনায় অত্র প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী গোলাম মোস্তফা বলেন, ওই তিন জন মাঝে মাঝে স্কুলে আসতো। তারা নিয়োগ পেয়েছে বললেও কোনোদিন নিয়োগ পত্র দেখায়নি। এবং কখনও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেননি।

তিনি আরও বলেন, জালালের আগে বাবুরাম নামে একজনকে পিওন পদে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাবুরামের থেকে বেশি টাকা দেওয়ায় সেসময় জালালকে নেওয়ার পরিকল্পনা করে সাবেক সভাপতি। শোনা যায় জালাল ৬ লাখ টাকা দিয়েছিল।

মাঝে মাঝে আসতো বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষক আতিকুর রহমান, মামুনুর রশিদ এবং এনামুল হক সহ একাধিক শিক্ষকরা। তারা জানান, আমরাও শুনতাম তারা নিয়োগ পেয়েছে। কিন্তু কখনও নিয়োগ পত্র দেখাননি বা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেননি। এরই মধ্যে অপহরণের এই ঘটনা শোনা যাচ্ছে।

ভুক্তভোগী হুমায়ুন রেজা খান বলেন, আমি গত ২০২২ সালে এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করি। তখন সভাপতি ছিলেন বশির উদ্দিন। যোগদানের পর তার কাছে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাগজ চাইলেও তিনি এখনও বুঝে দেননি। এরপর তিনি একক ক্ষমতা বলে গত ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানে তিনজন কর্মচারী নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এবং নিয়োগ বোর্ডও গঠন করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে তাদের নিয়োগ দেওয়া যায়নি।

এরইমধ্যে আমাকে অপহরণ করে নৈশ্য প্রহরী বাধন হোসেন, আয়া পদে ফারজানা ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে জালাল হোসেনের নিয়োগপত্র, যোগদানপত্রসহ এমপিওভুক্ত করতে যে যে কাগজপত্র প্রয়োজন হয় আমাকে মারধর করে সেই সকল কাগজে স্বাক্ষর করে নেয়। এরপর তারা আমাকে রাত ৭ টার দিকে ছেড়ে দেয়। ঘটনাটি আমার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি ও সহকর্মীদের জানিয়েছি এবং ওইদিন রাতেই আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এখন থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারি ভাবে সম্পন্ন হবে। সেই জন্য হয়তোবা তারা ওই তিন জনকে বৈধতা দিতে আমাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করে নিয়েছে। এই ঘটনার আমি বিচার চাই। বর্তমানে আমি আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি।

নৈশ প্রহরী পদের বাঁধন হোসেন মুঠোফোনে বলেন, “অপহরণের বিষয়ে কিছু জানি না। আমার বেতন হয়নি, এই জন্য সপ্তাহের পাঁচ দিনের মধ্যে একদিন স্কুলে যাই। আর অন্যান্য দিনে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। তবে ২০২৪ সালে আমার নিয়োগ হয়েছে। আজকে কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,এই সপ্তাহে আমি স্কুলে যাই নি। গোপালপুর বাজারে আছি।

আর ২৩ সালে নিয়োগ পেয়েছি বলে মুঠোফোনে জানান আয়া পদের ফারজানা। তিনিও অপহরণের বিষয়ে কিছু জানেন না। এছাড়া হাজিরা খাতায় সই করা বিষয়ে তেমন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে মাঝে মাঝে প্রতিষ্ঠানে যেতেন তিনি।

অপরদিকে মুঠোফোন রিসিভ করেননি পিওন পদের জালাল।

স্থানীয় পলাশ হোসেন ও সাইফুল ইসলাম সহ কয়েকজন বলেন,“ এই ঘটনাটি শুধু একটি স্কুল নয়, পুরো শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছ নিয়োগ ব্যবস্থার ওপর বড় প্রশ্ন তুলেছে। শিক্ষাকে বাণিজ্যিক স্বার্থের জালে ফেলা বন্ধ না করলে এমন ঘটনা আরও বাড়বে।”

এবিষয়ে জানতে পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি বশির উদ্দিনের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে, মুঠোফোন রিসিভ করেননি। তবে তার ছেলে বুলেট মুঠোফোনে বলেন,“ অপহরণের ঘটনাটি সত্য নয় বলে সংযোগটি কেটে দেয়। এরপর বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার মুঠোফোনটি রিসিভ করেন নি।”

বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ আনিছুর রহমান বলেন,“ অভিযোগ হাতে পেয়েছি। তদন্ত চলমান আছে। তবে তদন্তে এখন পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি নিয়োগ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ঝামেলা চলছে।”

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি বলেন,“ আমি বিষয়টি শুনেছি। গত বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ছুটিতে ছিলাম। আজ মঙ্গলবার থেকে অফিস করছি। বিস্তারিত পরে জানাতে পারবো।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print