ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ

‘জেব্রা ক্রসিং’ কি তা জানেন না বগুড়ার ৯০ শতাংশ রিক্সা চালক

'জেব্রা ক্রসিং' কি তা জানেন না বগুড়ার ৯০ শতাংশ রিক্সা চালক
'জেব্রা ক্রসিং' কি তা জানেন না বগুড়ার ৯০ শতাংশ রিক্সা চালক। ছবি: এনসিএন

ট্রাফিক আইনের জেব্রা ক্রসিং সম্পর্কে কোন ধারনা নেই বগুড়া জেলা শহরের ৯০ শতংশের বেশি রিক্সা চালকের। মূলত এ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা না করায় তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।

শহরের সাতমাথাসহ বিভিন্ন রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং এর চিহ্নিতস্থানে রাস্তা পরাপারের জন্য পথচারিরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা সেখানে তাদের যানবাহনের গতি আরো বাড়িয়ে দেয়।

শুধু রিক্সা চালকই নয়, ব্যক্তিগত কার, মাইক্রো, মোটরবাইক ও বাসসহ অন্য মোটরযানের চালকেরা জেব্রা ক্রসিং আইন মেনে চলেন না।

বগুড়া শহরে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন মোজাজফর হোসেন। দিনের বেশিরভাগ সময়ে তিনি শহর কেন্দ্রিক যাত্রীদের বাড়ি, অফিস কিংবা প্রয়োজনীয় স্থানে পৌঁছে দেন।

তবে ৪৮ বছর বয়সী মোজাফফর জানেন না ‘জেব্রা ক্রসিং’ কি। যখন তার কাছে জানতে চাওয়া হলো বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বললেন ‘এড্যা আবার কি? কিছুটা হতবাক হয়ে সে জানালো আজকেই এই কথা প্রথম শুনিচ্ছি (শুনছি)।’

একই কথা জানালেন রিক্সা চালক সোহান সরকার। তার কথায়, বগুড়া শহরে কয়েক বছর ধরে ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালাচ্ছেন তিনি। তবে এই শব্দটা আজই জানতে পারলেন। জেব্রা ক্রসিং এর কাজ কি সেটাও জানা নেই তার।

শুধু মোজাফফর কিংবা সোহান নয়, জেলা শহরে প্রায় ৬০ হাজার রিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা এবং থ্রি-হুইলার চলাচল করছে। যাদের ৯০ শতাংশই জানেন না জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবহার সম্পর্কে। জেব্রা ক্রসিং সম্পর্কে ধারনা না থাকায় পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

বুধবার (২০ জুলাই) সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যাত্রী বহনের জন্য ব্যাটারি চালিত রিক্সাগুলো যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ আবার শহরের প্রধান ফটকের যে জেব্রা ক্রসিংগুলো আছে সেগুলোও দখল করেছে।

আন্দালিব নামের এক শিক্ষার্থী জানালেন, শহরের প্রধান প্রধান স্থানগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে এসব যানবাহনগুলো। পথচারীদের জন্য যেসব জেব্রা ক্রসিং আছে সেগুলোও এখন তাদের দখলে। এ কারণে আমাদের নানাভাবে রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে। এমনকি যখন তখন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলেও জানিয়েছে দশম শ্রেণীর এই শিক্ষার্থী।

শহরের শপ্তাপদী মার্কেটে নষ্ট মোবাইল সাড়তে এসেছেন জেরিন আক্তার। জেব্রা ক্রসিং নিয়ে তার কন্ঠেও ঝড়লো আক্ষেপ। কলেজ পড়ুয়া জেরিন বলেন, নানা কারণেই আমাদের শহরে আসতে হয়। তবে বেশিরভাগ সময়ই রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ি। সাতমাথায় যে দু’একটি জেব্রা ক্রসিং আছে সেগুলো দখল করে থাকে রিক্সা চালকরা। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হতে হয়। জেব্রা ক্রসিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনার মতোও ঘটনা ঘটছে।

বিষয়টি সম্পর্কে বগুড়ার ট্রাফিক সার্জন (টিআই) রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো প্রতক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে জেলার এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান জানান, অনেক মানুষ যারা ক্ষেতে খামারে কাজ করতে তারা স্বল্প কায়িক পরিশ্রমে অধিক রোজগারের আশায় জমিতে মজুরী দেয়া মানুষ রিক্সা চালাচ্ছে। তাদের বললেও তারা কোন কথা শোনো না। পৌরসভা এ বিষয়ে মাইকিং করে ব্যাপক প্রচারন চালালে জেব্রা ক্রসিংসহ অন্য আইন সম্পর্কে জানতে পারতো। এর জন্য ব্যাপক প্রচারনা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই ট্রাফিক ইন্সপেক্টর।

এনসিএন/এ/এআইএ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print