ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

আমাকে বাঁচাতে দিন আমি বাঁচাতে চাই, আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছি : তাছলিমা

আমাকে বাঁচাতে দিন আমি বাঁচাতে চাই। আমি অনেক কষ্ট পাচ্ছি। এভাবেই নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানায় বারো বছর বয়সী শিশু তাছলিমা। একমাত্র সন্তানের বাঁচার আকুতি দেখে কান্নায় জর্জরিত হয়ে পড়েন বাবা-মা।

বগুড়া জেলা গাবতলী উপজেলার দূর্গাহাটা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বেতুয়াকান্দি গ্রামের দরিদ্র পিতার একমাত্র সন্তান বারো বছর ছয় মাস বয়সী তাছলিমা আক্তার এর চোখে এখনও অনেক স্বপ্ন। লেখাপড়া শিখে ডা. হওয়ার স্বপ্ন যেন আজ এক নির্মম বাস্তবতায় থমকে গেছে। কারণ, বোন ক্যানসার নামক মরণ রোগে আক্রান্ত শিশুটি। মাস ছয়েক আগে তার বাম পায়ের হাড়ে বোন ক্যানসারে ধরা পরে। সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য অপারেশন করতে প্রয়োজন প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। যে বয়সে তাছলিমার তার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করার কথা সেই বয়সেই তাছলিমাকে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছে তাছলিমা, একা দাঁড়াতে, বসতে অন্যের সহযোগীতা নিতে হয়। হাত তুলে আল্লাহর কাছে নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়ে ফরিয়াদ জানাচ্ছে তাছলিমা। দুচোখ দিয়ে টপ টপ করে পড়ছে পানি। ব্যাথায় কাঁদতে কাঁদতে চোখেও ঝাপসা দেখেন তিনি। বাম পা ফুলে গেছে। একমাত্র মেয়ের এমনকষ্ট দেখে কাঁদছেন মা শাজিনা আক্তার। মেয়ের এমন কষ্ট দেখে সইতে না পেরে চিকিৎসার জন্য বাড়ির ভিটা বাদে সব জমি,গরু বিক্রি করেন বাবা তাজুল ইসলাম।

তাসলিমার ভাই শাখিন আহম্মেদ জানান, গত জানুয়ারিতে তাছলিমা তার পায়ের ব্যথার জন্য চিৎকার করতে থাকে। প্রথমে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে ড. ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যায়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষায় তাসলিমার বাম পায়ের হাড়ে বোন ক্যানসারে আক্রান্ত বলে জানান চিকিৎসক। এরপর থেকেই চলছে চিকিৎসা। ডাক্তার প্রথমে চারটি কেমোথেরাপি দিতে বলেন। বগুড়ায় বোন ক্যান্সারের ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সিরাজগঞ্জ খাঁজা ইউনুছ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা চলতে থাকে তার। প্রতিটি কেমোথেরাপির জন্য সবকিছু মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এভাবে তিনটি কেমোথেরাপি দিতে আমার বাবা বাড়ির জায়গা ছাড়া সবকিছুই বিক্রি করে দিয়েছে। ধারদেনা ও মানুষের সহযোগিতায় যা পেয়েছি তাও শেষ। এমতাঅবস্থায় আমাদের পাশে যদি কেউ না দাঁড়ায় তাহলে এভাবে তোকে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে আমার একমাত্র ছোট বোন। বোনের চিকিৎসার খরচ করতে যেয়ে আমারও লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

দিনযতই পার হচ্ছে ততই অসুস্থ হয়ে পড়ছে তাসলিমা। দ্রুত অপারেশন এবং কেমোথেরাপি না দিলে তাসলিমাকে বাঁচানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

চাঁন মিয়া বলেন, তাছলিমার অপারেশন ও কেমোথেরাপি দিতে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। মেয়ের চিকিৎসার জন্য আমার ছোট ভাই সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসার খরচ যোগাতে তার বাড়ি ছাড়া সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছে। এখন সে অন্যের জমিতে কাজ করে কোন মতে বেঁচে আছে। এখন মেয়ের চিকিৎসা খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। দরিদ্র এই পরিবার এখন তাকিয়ে আছে সমাজের বিত্তবান মানুষের দিকে।

স্থানীয় প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম বলেন, তাছলিমার চিকিৎসার জন্য আমরা গ্রাম এবং এবারে ঈদে ঈদগাহ মাঠ থেকে সবাই মিলি কিছু টাকা সংগ্রহ করে যা দিয়ে ছিলাম সেটাও শেষ। আমি মানবিক মানুষদের প্রতি আকুল আবেদন করছি একটু সহায়তা দিন, তাছলিমার জীবন বাঁচান।

সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে তাছলিমার মা বলেন, তাসলিমা আমার একমাত্র ছোট মেয়ে। তার এমন কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। পড়ালেখায় ভীষণ আগ্রহী ছিল এবং তার স্বপ্ন ছিল বড়ো হয়ে ডাক্তার হওয়ার। এখন সেই স্বপ্ন ঝরে পড়ছে। তাছলিমা গাবতলী দুর্গা হাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে আষ্টম শ্রেণীতে পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে।

গাবতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, এবিষয়ে আমার কাছে আবেদন আসলে আমি যাচাই-বাছাই করে আমার বিধি মোতাবেক তাদের পাশে দাঁড়াবো।

তাসলিমা আক্তারের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে এই নাম্বারে- ০১৭৯১৭৩৬৬০৫ (বিকাশ,নগদ)

এবং সোনালী ব্যাংক গাবতলী শাখা একাউন্ট নাম্বার – ০৬১৩০০১০৩৫৭২৭

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print