ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ১০:০০ পূর্বাহ্ণ

কৃষকের স্বপ্ন এখন ময়লার ভাগাড়ে! সংরক্ষণের অভাবে পঁচেছে আলু, ঋণের চাপে মাথায় হাত

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা আলু নিয়ে কতো না স্বপ্ন ছিলো কৃষকের। তবে সেই আলুই এখন স্বপ্ন ভাঙছে তাদের । সংরক্ষণের অভাবে পঁচন ধরেছে আলুতে। আর পঁচন ধরা আলু বস্তায় বস্তায় ফেলে দিতে হচ্ছে পুকুরে কিংবা রাস্তার ধারে।

এদিকে লোকসানের কারণে ঋণের পাল্লা ভারী হওয়ায় দুশ্চিন্তায় এখন কৃষকরা। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কোন ধরনের পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকের। আর কৃষি বিভাগ বলছেন, কৃষকরা আলু সংরক্ষণের অভাবে দাম না পেলেও, নষ্ট হয়নি আলু।

অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি আলু উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকরা। গেল মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত হিমাগারের অভাবে কৃষকের উৎপাদিত আলু সংরক্ষণে পরেন বিপাকে। মৌসুমের শুরুর দিকে কিছু আলু বিক্রি করতে পারলেও পরবর্তীতে হিমাগারের জায়গার সংকট দেখা দিলে জেলা সদরের ঢোলারহাট, আঁকচা ও নারগুনসহ বেশকয়েকটি ইউনিয়নের প্রান্তিক কৃষকেরা বাড়ি কিংবা আশপাশে টিনের সেড নির্মাণ করে সংরক্ষণ করেন আলু। তবে দু’মাস যেতে না যেতেই পচন ধরেছে আলুতে। এদিকে লোকসানের কারনে ঋণের পাল্লা ভাড়ি হওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় এখন কৃষক।

অভিযোগ করে কৃষকরা বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হলেও এখন ২০ হাজার টাকাও মিলছে না আলু বিক্রি করে। আলু রাখার জায়গা না পেয়ে বাড়ির পাশে সেড তৈরি করে আলু সংরক্ষণের চেষ্টা করলেও তা পচে যাচ্ছে।

এখন পচা আলু ফেলে দেয়ার জায়গাও মিলছে না অভিযোগ করে চাষিরা বলেন, যে যেভাবে পারছে আলু ফেলে দিচ্ছে। এতে দুর্গন্ধে চলাফেরাও কঠিন হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ কোন উদ্যোগ নেয়নি সংরক্ষণে। তাই উপায় না পেয়ে কৃষকরা এখন দিশেহারা।

আলু ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম, আবু রায়হানসহ অনেক ব্যবসায়ী জানান, কৃষকের উৎপাদিত আলু সংরক্ষণে বা সরকারের পক্ষ থেকে রফতানিতে ভূমিকা না রাখার কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামীতে এমন পরিস্থিতি নিরসনে কার্যত পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্থানীয়রা বলছেন, এক সময় কৃষকের উৎপাদিত আলু বিদেশে পাঠানো হলেও এখন দেশের আলু দেশেই পচে যাচ্ছে। শুধু মাত্র সংরক্ষণের অভাবে। সে কারণে কৃষকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ময়লার ভাগাড়ে কিংবা যত্রতত্র ফেলে দিচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, আমরা আলু সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এবং আমরা নিয়মিতই খোঁজ নিচ্ছি। তবে আলু নষ্ট বা পচে গেছে এমন খবর আমার জানা নেই। কৃষক দাম পাচ্ছেনা তবে আলু নষ্ট হচ্ছে না ,কৃষক প্রয়োজনে আলু গরুকে খাওয়াচ্ছে কিন্তু নষ্ট হচ্ছে না।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, গত মৌসুমে ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। আর জেলায় হিমাগারের সংখ্যা ১৭ টি। এসব হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা দেড় লাখ মেট্রিক টন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print