ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

ঘোড়ার টমটম গাড়িতে বিদায়ী প্রধান শিক্ষককে রাজকীয় বিদায় জানাল শিক্ষার্থীরা

লালমনিরহাট চাকরি জীবনের শেষ দিনে বারাজান এসএসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সুসজ্জিত ঘোড়ার টমটম গাড়িতে করে বিদায় জানিয়েছেন বর্তমান, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহকর্মীরা ও এলাকাবাসী।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বারাজান এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সরকারকে এভাবে বিদায় জানাতে দেখা যায়।

অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সরকার চলবলা ইউনিয়নের বারাজান গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বারাজান এসএসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।জানা গেছে, বিদায় মানেই বেদনার। তবুও বেদনার দিনকেও স্মৃতিময় করতে নানান আয়োজন চলে সমাজে। এমনই এক ব্যতিক্রম আয়োজনে প্রিয় প্রধান শিক্ষককে বিদায় জানালেন বারাজান এসএসসি বিদ্যালয়ের ১৯ ৯৬ সাল থেকে ২০২৪ সাল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা, সহকর্মীরা ও এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার ( ৬ ফেব্রুয়ারি) ছিল বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সরকারের চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস।

শেষ কর্মদিবসে প্রিয় প্রধান শিক্ষককে বিদায় জানাতে সাজানো হয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, করা হয় আলোচনা সভা, দেওয়া হয় সম্মাননা।সব শেষে প্রিয় শিক্ষককে কর্মস্থল থেকে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় সুসজ্জিত ঘোড়ার টমটম গাড়িতে। ঘোড়ার টমটম গাড়ির আগে পিছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসী নিয়ে এগিয়ে দেন সহকর্মীরা।গাড়িতে ওঠার সময় বিদায়ী প্রধান শিক্ষককে ফুল ছিটিয়ে ও ফুলের মালা পরিয়ে বিদায় জানানো হয়। প্রিয় শিক্ষার্থী ও সহকর্মী এমন আয়োজনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রদীপ কুমার সরকার।

সুসজ্জিত এ ঘোড়ার টমটম গাড়ি দেখে পুরো পথে পথচারী ও স্থানীয়রা অপলক তাকিয়ে থেকেছেন। এ দৃশ্য দেখে পুরো এলাকাবাসীর বুঝতে বাকি নেই, এ পথে প্রতিদিন চলা শিক্ষার কারিগর প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সরকারের আজ বিদায়। তার চাকরি জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে।বিদায়কালে প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সরকার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু দোয়া রেখে গেলাম। তোমরা নিজেদের মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিমন আহমেদ বলেন, ‘বিদায় বড় কষ্টের, তবুও মানতে হবে। আমাকেও এভাবে একদিন বিদায় নিতে হবে। একজন শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁকে সুসজ্জিত ঘোড়ার টমটম গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্মরণে রাখতেই এমন ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজন।’

এ বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, একজন শিক্ষক যখন তাঁর চাকরিজীবন শেষে বাড়ি ফিরে যান তখন অনেক কষ্ট পান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের রেখে চলে যাওয়া খুবই কষ্টের। বিদায়ের কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্যই কর্তৃপক্ষ ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন করা হয়েছে। জেলায় এই প্রথম এমন উৎসবের বিদায়। শুধু প্রদীপ কুমার সরকার নন, প্রতিটি শিক্ষকের বিদায় এমনই হওয়া উচিত।

বারাজান এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়োজনে বিদায় অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন- কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা, কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ, তুষভান্ডার মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান, এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার একেএম মঈনুল হক।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print