নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিন এবার দশ লাখ টাকার চেক নিয়ে হাজির হয়েছেন। বহিস্কৃত ওই নেতার দাবি তিনি বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল আলম খানের কাছ থেকে ধারের দশ লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু সেই টাকা দিতে তালবাহানা করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক ওই চেয়ারম্যান। তাই টাকা ফেরতের আশায় হাতে একটি চেক নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে “এডিট করা ফেক মোবাইল কল” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে তার এবং দলীয় ইমেজ ক্ষুন্ন করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন সাবেক সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিন।
রবিবার ২৪ নভেম্বর দুপুরের দিকে বদলগাছী সাংবাদিক সংস্থার কার্য়ালয়ে হাজির হয়ে তিনি এই দাবি তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে সৌখিন বলেন, বিগত ২০১৩ সালে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানীমূলক ভাবে বিষ্ফোরক ও দ্রুত বিচার আইনে আওয়ামী লীগ মামলা করে। ক্লিন হার্ট অপারেশনে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমাকে অনেক নির্যাতন করা হয় শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতি করার জন্য। আমি জানতে পেরেছি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম খানের সাথে আমার একটি কল রেকর্ড প্রকাশ হয়। যা সম্পূর্ন এডিট করা ফেক মোবাইল কল। কল রেকর্ডটি আগষ্ট মাসের। প্রকৃত তথ্য এই যে, শামসুল আলম খান ইতোপূর্বে তার একটি ব্যাংক চেক গচ্ছিত রেখে আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করেন। যার নম্বর: CD /A- ২৮৮৫০৯২ (ডাচ বাংলা ব্যাংক)। এভাবে তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আরও অনেকের কাছ থেকেই তিনি টাকা ধার করেছেন বলে লোকমুখে জেনেছি। অতি সম্প্রতি জানতে পারি যে, তিনি কিছু কিছু পাওনাদারদের ধারের টাকা পরিশোধ করছেন। এ কারণে আমি তার নিকট আমার পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য কল করেছিলাম। এছাড়া আমার পাওনা টাকা নেওয়ার জন্য তার সামনা-সামনি হলে সে আমাকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ভয় দেখাতো। আমি গত ২০১৪ সালের ৫নভেম্বর আওয়ামীলীগের বিস্ফোরক মামলার বিবাদী হওয়ার কারণে আগষ্ট মাসের সেই কল রেকর্ডটি নতুন করে “এডিট” করে যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। আগষ্ট মাস থেকে এখন পর্যন্ত শামসুল আলম খানের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। আপনারা চাইলে আমি এক মাসের কল রেকর্ড দিতে পারি।
সদ্য বহিস্কৃত এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, পাওনা সংক্রান্ত ওই কল রেকর্ডটি আবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশও করা হয়েছে। শুধুমাত্র আমাকে এবং আমার দল বিএনপিকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যই ফেক কল রেকর্ডটি ছেড়ে দেওয়া হয়। মর্যাদাহানি করার জন্যই তারা এই মিথ্যা এবং বানোয়াট রেকর্ড ছেড়ে দিয়েছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং সেই সাথে দুস্কৃতকারীদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি। এছাড়া আমার সততার জন্য আমার প্রাণের সংগঠন বিএনপি আমাকে আবার দল নিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ সত্য একদিন উদঘাটন হবেই।
এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল আলম খান বলেন, ঘটনার দিন নওগাঁয় আদালতে একটা কাজে গিয়েছিলাম। ওই সময় একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। নিজেকে চাংলার সৌখিন পরিচয় দিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করা হয়।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর হত্যার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক বেলাল হোসেন সৌখিনের বিরুদ্ধে। ওই দিন রাত থেকে ওই দুই নেতার কথোপকথনের ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। অপরদিকে উপজেলার গোবরচাঁপা বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে গত ৫ নভেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল আলম খানসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে স্থানীয় থানায় মামলা করেন বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন সৌখিন। এ মামলায় আরও ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এরপর টাকা চাওয়ার ওই কল রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়লে টক অব দি শহরে পরিণত হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দল থেকে সৌখিনকে বহিস্কার করা হয়।
