ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

ফুটবল মাঠে চলছে খোয়া ভাঙা; ক্ষুদে খেলোয়াড়দের ক্ষোভ 

নওগাঁর রাণীনগরে একটি ফুটবল মাঠে খোয়া ভাঙার কাজ চলছে। অভিযোগ মোকলেছুর রহমান বাবু নামের এক ইউপি চেয়ারম্যান শ্রমিক দিয়ে খোয়া ভাঙার এই কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। আর এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন ওই মাঠে ফুটবল খেলতে না পারা ক্ষুদে খোলোয়াড়রা।

তারা বলছেন প্র্যাক্টিসের জন্য তাদের যেতে হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার মাঠে। স্থানীয়রা জানালেন মাঠটি দ্রুত পরিস্কার করা হোক। আর চেয়ারম্যান বলছেন এই গরমে খেলা তাদের জন্য কষ্টকর, তারপরও দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হবে।

অপরদিকে ইউএনও জানালেন দ্রুত খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।

মোকলেছুর রহমান বাবু কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর এলাকায় মানিক বাজার নামক মাঠটিতে একসময় প্রায় প্রতিদিন চলতো খেলা। হাজার হাজার ফুটবল প্রেমিরা সেই খেলা উপভোগ করতো। এই মাঠে খেলেছে দূর দূরান্তের অনেক ভালো ভালো খেলোয়াড়। এবং এই মাঠে খেলা শিখে অনেক খেলোয়াড় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু দিন দিন মাঠের সেই জৌলুষ হারিয়ে গেছে। কেউ আর তেমন খোঁজ রাখে না। তাইতো যে যার মতো ব্যবহার করছে। কেউ ছাগল ছেড়ে দিয়ে রাখে, কেউ ধান শুকায়, আবার কেউবা ভ্যান চালিয়ে যান। বর্তমানে মাঠটিতে চলছে খোয়া ভাঙার কাজ। অবশ্য এর দুই মাস আগে ইটের স্তুপ রেখে দেওয়া হয়। ফলে দুই মাস থেকে ফুটবল খেলতে পারছে না এলাকার ক্ষুদে খেলোয়াড়রা। প্র্যাকটিস করতে না পেরে খেলার মান কমে যাচ্ছে তাদের। আর এই কারণে দূর দূরান্তের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে খেলতে হচ্ছে তাদের।

এলাকার মাঠে খেলতে না পেরে ক্ষোভ ঝাড়লেন একাধিক ক্ষুদে ফুটবল খেলোয়াড়। তারা চেয়ারম্যানের ভয়ে কিছু বলতে পারছেনা, আবার মুখ বুঝে সহ্যও করতে পারছে না। এমনভাবেই অভিযোগ করেন তারা।

নিজের মাঠে খেলতে না পেরে পাশের মাঠে খেলতে আসা গোলকিপারসহ একাধিক খেলোয়াড় ক্ষোভের সহিত জানালেন, আমরা নিজের মাঠে খেলতে পারছি না এটা খুব কষ্টের। নিজের মাঠে খেলবো এটা কতো আনন্দের, অথচ আজ খেলতে পারছিনা। সেই জন্য কুজাইল বাজারের মাঠে খেলতে এসেছি।

স্থানীয় এক নারী জানালেন, খেলার মাঠে এসব জঞ্জাল আনা ঠিক হয়নি। দ্রুত পরিস্কার করার দাবি জানান তিনি।

স্থানীয় ৪৮ বছরের এক ব্যক্তি জানালেন, আমার বয়স থেকে দেখে আসছি এখানে এলাকার ছেলেরা ফুটবল খেলে। আমিও খেলেছি মানিক বাজার নামক এই মাঠে। এই মাঠে ছেলেরা একটা হাঁস পর্যন্ত নামতে দেয়নি। অথচ এক সপ্তাহ থেকে এই মাঠে খোয়া ভাঙার কাজ চলছে। এছাড়া গত দুই মাস আগে থেকে নিলামে কেনা কিছু ইট এই মাঠে নিয়ে এসে জড়ো করা হয়েছে। ছেলেদের অসুবিধা হলেও এসব কথা কে বলতে যাবে? এক প্রকার ভয় নিয়ে বলেন তিনি।

একইভাবে একাধিক যুবক জানালেন, মাঠের পাশে সাজানো ওই ইটগুলো রাখতে দেওয়া হয়নি। কারণ আমরা এখানে ধান শুকাবো। এক যুবক একসময় ক্ষোভ নিয়েই জানালেন এই মাঠ বিক্রি করে দিক। কারণ একসময় ছেলেরা একটা হাঁস মুরগী পর্যন্ত নামতে দেয়নি। আর এখন কেউ বাঁধা দেয়নি। আমি যেমন বাঁধা দেওয়ায় রাখতে পারে নি, এরকম ৪-৫ জন বাঁধা দিলে আর রাখার সাহস হতো না। এদিকে দুই মাস আগে থেকে নিলামে কেনা বেশ কিছু ইট স্তুপ করে রাখা হয়েছে সেই মাঠে। শ্রমিক দিয়ে ইট ও রাবিশ বাছাই করে নিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি জানালেন, কুজাইল হাট ভাঙার ইটগুলো এখানে রেখেছিল। আমি সেই রাবিশগুলো ১২ হাজার টাকায় কিনে নিয়েছি। এখন শ্রমিক দিয়ে বাছাই করে নিয়ে যাচ্ছি।

আর ওই ইটগুলো রেখেছে চেয়ারম্যান। মাঠের কিছু কাজ করতে চেয়ে খোয়া ভাঙার কাজ করছে তিনি। ১০-১২ দিন থেকে চেয়ারম্যান এই কাজ করছে।

তবে ক্ষুদে খেলোয়াড় এমনকি স্থানীয়রা কেউ ভয়ে নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। তাদের অনুরোধ নাম প্রকাশ করা যাবে না। আবার কেউ কেউ মন্তব্য করলেন প্রতিবাদ করলেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে মাঠে খোয়া ভাঙার কথা স্বীকার করেন চেয়ারম্যান মোকলেছুর রহমান বাবু। তিনি মুঠোফোনে বলেন, একটি রাস্তার কাজ চলছে। কোন জায়গা না পেয়ে সেখানে রাখা হয়েছে। তবে ৮-১০ দিনের মধ্যে সরিয়ে নিব। আর এই গরমের মধ্যে ছেলেদের ফুটবল খেলা একটু কষ্ট হবে। মাঠের উন্নয়ন হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেখা যাক, কি উন্নয়ন করা যায়।

জানতে চাইলে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাকিবুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। খেলাধুলার বিষয়ে কোন ছাড় নেই। তাই দ্রুত ওই ইট ও খোয়াগুলো সরিয়ে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print