১১টি উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা। এজেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা হিসেবে পরিচিত বদলগাছী উপজেলায় ২ লক্ষ ৬ হাজার ৫ শত ৪৭ জন মানুষের বসবাস। জেলা সদর থেকে এই উপজেলার দুরুত্ব ১৭ কিলোমিটার। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কথা চিন্তা করে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণ করেন সরকার।
কিন্তু এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, ধীরে ধীরে অনিশ্চিতায় পড়েছেন তারা। অভিযোগ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কানিজ ফারহানার অবহেলা আর উদাসীনতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা থেকে মন উঠে যাচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের।
গত ২০ এপ্রিল রবিবার সকাল ৯ টা। বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় রোগীদের উপচে পড়া ভীড়। হাতে ও পায়ে ব্যথা নিয়ে কয়েকজন রোগী চিৎকার করলেও পাচ্ছে না সেবা। কষ্টে কাটছে তাদের সময়। এসব বিষয় দেখভালের জন্য অফিসে তখনো আসেনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কানিজ ফারহানা। তার অনুপস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা ও দাপ্তরিক কাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা জটিলতা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। আর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলছেন দাপ্তরিক কাজে বাহিরে থাকতে হয় মাঝে মধ্যে।
সুত্রে জানা যায়, বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কানিজ ফারহানা ১৪ মার্চ ২০২২ সালে এ হাসপাতালের দায়িত্ব নেন। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে তিনি অনুপস্থিত থাকেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে কর্মস্থলে ১০-১২ দিন অনুপস্থিত আর ডিসেম্বর মাসে ১৮-২০ দিন অনুপস্থিত, এক সপ্তাহ লেট এবং বাকী দিন গুলোতে সে সকাল দশটার পর আসেন এবং দুপুর দেড়টায় অফিস ত্যাগ করেন। তার দেরীতে আসা যেন নিত্য দিনের রুটিনে পরিনত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ বর্তমানে তিনি আরো দেরীতে আসেন। বেশ কয়েকদিন সরেজমিনে গিয়েও তার সত্যতা পাওয়া যায়। শুধু কর্মস্থলে অনপস্থিত নয়, সে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সরকারি গাড়ী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আসছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি কোয়ার্টারে থাকার নিয়ম থাকলেও সে যোগদানের পর থেকেই নওগাঁ সদর থেকে অফিস করেন। আর এভাবেই তিনি সেবাগ্রহীতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দিনের পর দিন, এমনকি মাসের পর মাস ইচ্ছেমতো চাকুরি করে চলেছেন। যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয়রা বলছেন গত এক বছর থেকে চালক অভাবে এ্যম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত এই উপজেলার অসহায় রোগীরা। ফলে চালক অভাবে নষ্ঠ হচ্ছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এ্যাম্বুলেন্সটি। এবং গত বছরের ৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে হাসপাতালে চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটে। এবং হাসপাতালের রাজস্ব খাতের ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা চুরি হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪ মাসেও করেনি কোন মামলা। চলতি মাসের ৭ এপ্রিল আউটডোরে টিকিট কাউন্টারে রোগীর কাছ থেকে টিকিট বাবদ ৩ টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৫ টকা। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার জানানোর পর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত নেওয়া হয় নি কোন ব্যবস্থা।
সচেতন মহল বলছে সরকারি বিধি অনুসারে একজন কর্মকর্তা তিন বছরের অধিক একই জায়গায় থাকতে পারবেন না। কিন্তু নিজ কাজে এতো উদাসিনতা আর অবহেলার পরও সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে স্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন ডা: কানিজ ফারহানা। তার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানা জানান, চুরির ঘটনায় থানায় জিডি করেছি, পুলিশ তদন্ত করছে। রোগীর কাছ থেকে টিকিট বাবদ ৩ টাকার জায়গায় ৫ টাকা বেশী নেওয়ার বিষয়ে তাকে সাবধান করেছি।
মাসে অধিকাংশ দিন অফিসে অনুপস্থিত আর লেট করে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাপ্তরিক কাজের জন্য এমনটা মাঝে মাঝে হয়। ব্যক্তিগত কাজে অফিসের গাড়ী ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে জ্বালানী বাবদ কোন বিল পাই নি। নিজ খরচে গাড়ী ব্যবহার করছি।
ডা: কানিজ ফারহানার বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা: মো আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমি চলতি বছর এখানে এসেছি, গত দুই মাসের হাজিরা দেখেছি, সেখানে দুই তিন দিন অনুপস্থিত পেয়েছি। ইতিমধ্যে তাকে বলেছি, তিনি আর এমনটি করবেন না। এছাড়া গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের হাজিরা দেখবো। সেখানে তার অনুপস্থিতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর চিকিৎসা সেবা ক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতার সাথে কারো কোনোরকম অবহেলা মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি। অপরদিকে চিকিৎসক সংকট মেটানোর জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
