ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৭:২৫ পূর্বাহ্ণ

শিরু’র ইট ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে পুড়ল ফসল

ইটের ভাটার ধোয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসল। ছবিঃ এনসিএন
ইটের ভাটার ধোয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসল। ছবিঃ এনসিএন

বগুড়ার শাজাহানপুরে শফিকুল ইসলাম শিরুর মালিকানাধীন সিরাত ব্রিকস ইট ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় ৭০ বিঘা জমির ফসল পুড়ে গেছে।এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান,সবজি, কলা বাগান, বাশঁঝাড় সহ বিভিন্ন প্রজাতির সহস্রাধিক গাছপালা। জমির পাকা ধান পুড়ে যাওয়ায় ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা কৃষকরা।

উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের জামালপুর সিরাত ব্রিকস নামের একটি ইট ভাটায় গত রবিবার রাতের আঁধারে বিষাক্ত গ্যাস ছাড়াই ভাটার পাশে এলাকা জুড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

গতকাল সোমবার এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে অভিযোগ ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আশিক খান।

ভ্রম্যমান আদালত সূত্রে জানা যায়, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নির্মাণ ২০১৩ আইনে সিরাত ব্রিকস ইট ভাটাকে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক খান জানান, ইট ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ফসল নষ্ট হওয়ায় স্থানীয় কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে অভিযোগ দিলে পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন,থানার অফিসার ইনচার্জ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সমন্বয়ে সরজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় । পরিবেশ অধিদপ্তর সাথে নিয়ে পরিবেশ ক্ষতি করা ইট ভাটা আইন জরিমান করা হয়।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, গত রবিবার আঁধারে সিরাত ব্রিকস গ্যাস ছেড়ে দেয় ভাটার মালিক।এতে আস্তে আস্তে ভাটার পাশে জমিতে ধান সহ সবজি জমি পুড়ে গেছে।

জামালপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে আমার ২ বিঘা জমির আধাপাকা ধান পুড়ে গেছে।আমি এর ক্ষতিপূরণ চাই।’

সবজি চাষি হোসেন আলী জানান, ‘তার ২০ শতকের ওপর করলার ক্ষেত ছিল। ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে গাছ মরে গেছে।’

আরেক কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘আমি ৪ বিঘা ধান করেছিলাম। সমস্ত ধানগাছ ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে শেষ হয়ে গেছে। বুক ফেটে আমার কান্না আসছে।’

কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, ‘ইটভাটা থেকে কখন যে গ্যাস ছেড়েছে, তা আমি জানি না। আমার সাড়ে ৪ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এখন ফকিরের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। গ্যাসে ধানের সঙ্গে পতিত জমির ঘাস পর্যন্ত পুড়ে গেছে। কৃষকের আবাদের সঙ্গে এমন অন্যায় মেনে নিতে পারছি না।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, ‘ইট ভাটার গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক ভাবে ৫০-৬০ বিঘা ফসলের ১৫-২০ লক্ষ টাকা ক্ষতি ধারনা করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন তৈরি করছে।অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম শিরু মালিকানাধীন সিরাত ব্রিকস পক্ষথেকে কৃষকের ফসলের ক্ষতিপূরণ না দিলে ইট ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।’

এ ব্যাপারে ইট ভাটার মালিক শফিকুল ইসলাম শিরু ভাটা থেকে ছেড়ে দেওয়া গ্যাসে বিষয়ে অস্বীকার করেন। তিনি আরও দাবি করেন কৃষকরা যতটা অভিযোগ করছেন ততটা ক্ষতি হয়নি।
তবে ওই ভাটার দেখাশোনা করেন আতাউর রহমান আলাল নামে তার নিকট আত্মীয়। তিনি ইটভাটা থেকে নির্গত হওয়া ধূয়ার কারণে ফসলের ক্ষতির বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print