ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ

কুজাইল হাটের পল্লী মার্কেট ভবন নির্মাণে

সাড়ে চার কোটি টাকার কাজে শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ 

নওগাঁর রাণীনগরে কুজাইল হাটের পল্লী মার্কেট ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এখন চলছে পাইলিংয়ের কাজ। আর সেই পাইলিংয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। অভিযোগ ৬২ ফিট রড দেওয়ার কথা থাকলেও একাধিক জায়গায় ৪০ ফিট আবার কোথাও শুধুমাত্র ২২ ফিট রড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই কাজের শুরুতে ব্যবহার করা হয়েছে ছোট আকৃতির ময়লাযুক্ত পাথর ও বালু। আবার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাতের বেলা করছে কাজ। এতে কাজের গুণগত মান নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

তাই স্থানীয়রা বলছেন সাড়ে চার কোটি টাকার কাজের শুরুতেই অনিয়ম করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

তবে রাতের বেলা বোরিংয়ের কাজ চললেও কোনো অনিয়ম হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বলছেন আমাদের অনুপস্থিতিতে বোরিং করতে পারে। তবে রড সিমেন্ট দেওয়ার সময় আমাদের লোকের সামনে দিতে হবে। আর উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন আমাদের অফিসের লোক সার্বক্ষণিক থাকার কথা। এদিকে ঈদের ছুটির পর গত ১৪ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করেছে তারা। ঈদের আগে ও পরে সরেজমিনে কয়েকদিন গিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এলজিইডির কাউকে পাওয়া যায়নি। চালিয়ে যাচ্ছে কাজ। স্থানীয় দোকানদাররা জানালেন রাতের বেলা কাজ করে। বিষয়টি এলজিইডি কর্মকর্তাকে জানানোর পর টনক নড়ে তাদের।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগের সুরে জানান, শুরু থেকেই তারা যেনতেনভাবে কাজ শুরু করেছে। রাতেও নির্মাণ কাজ চালিয়েছেন। ডিজাইনকৃত বিল্ডিংয়ের পশ্চিম দিকে একাধিক জায়গায় ৬২ ফিট রডের পরিবর্তীতে ৪০ফিট রড দেওয়া হয়েছে, আবার কেউ বলছেন ২২ফিটও দেওয়া হয়েছে। একপ্রকার চ্যালেঞ্জের সুরে তারা বলেন, পরীক্ষা করলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে।

তারা আরও জানান, ঢালাই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ময়লাযুক্ত বালু, কুচিযুক্ত পাথর ও শাহ্ নামীয় সিমেন্ট। এলজিইডি অফিসের সংশ্লিষ্টদের রয়েছে সঠিক তদারকির অভাব। এছাড়া ১৬ মিলি লম্বা রডে ১০ মিলি রড দিয়ে স্প্রেল করে খাঁচা বানানো হচ্ছে। সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কুজাইল হাটে চারতলা ফাউন্ডেশনে দুতলা পল্লী মার্কেট ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। যার প্রাক্কলিত মুল্য ধরা হয় ৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কাজটি পায় মেসার্স সাহারা কনস্ট্রাকশন-ইএসবি নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবনের নির্মাণ কাজটি গত বছরের ১৯ মে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে নির্ধারিত সময় আগামী ৩০ আগষ্ট শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। যার কারণে দ্রুত গতিতে কাজ সম্পন্ন করার জন্য দায়সারাভাবে কাজ করবেন বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জানতে চাইলে কুজাইল বাজার কমিটির একজন বলেন, তারা শুরুতে লোক দেখানো ভালো কাজ শুরু করেছিল। তখন দিনে দুটি পাইলিং সম্পন্ন করতে কষ্ট হয়েছে। এখন হঠাৎ করে তিনটা এমনকি চারটি পর্যন্ত পাইলিং সম্পন্ন করেছে। কম রড দিয়ে না করলে কিভাবে সম্ভব? তারা ৪০ফিট রড দিয়ে কাজ করেছে। এছাড়া প্রতিদিন এলজিডির সংশ্লিষ্টদের দিনে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয় তারা। জানতে চাইলে মেসার্স সাহারা কনস্ট্রাকশন-ইএসবি নামক প্রতিষ্ঠানের প্রোজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার ইমরুল কায়েস ইমন মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, ৬৫ ফিট বোরিং করতে হচ্ছে। আর ৬২ফিট রড। রড কম দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। এটা অসম্ভব বিষয়। কারণ এলজিইডি অফিসের লোকজন সবসময় থাকছে। তাদের অনুপস্থিতিতে আমরা শুধু বোরিং বা কনস্ট্রাকশনের কাজ করতে পারি। অনেক সময় সর্বোচ্চ রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করি। তবে ঢালাই বা কাস্টিং করা হয়না। যখন ঢালাই করবো তখন এলজিইডি অফিসের লোকজন উপস্থিত থাকেন। কাজেই এরকম কোনো সুযোগ নেই এখানে। আর ঈদের দুই দিন আগে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন কিছু সময়ের জন্য একবার এসেছিল। ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট রাসেল আহম্মেদ ছিলেন।

ইমন একসময় গর্বের সহিত বলেন, আমাদের ঠিকাদার কোনো লুঙ্গি পড়া বা লোকাল ঠিকাদার না। তিনি রুয়েটের একজন ইঞ্জিনিয়ার। জানতে চাইলে উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে কালবেলাকে একই সুরে বলেন, রড কম দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। কারণ টেস্ট করেই রড দেওয়া হয়েছে। তারপরও যেগুলো সন্দেহ মনে হবে সেগুলো আবার টেস্ট করা হবে। যারা অভিযোগ করেছে, তাদের নিয়ে অফিসে আসেন। নির্দিষ্ট করে বললে প্রয়োজনে আমরা আবার টেস্ট করবো। আর আমাদের লোকজন সবসময় উপস্থিত থাকে। তারপর অনেক সময় উপস্থিত থাকতে না পারলে তারা শুধু বোরিং করে। আমরা পরীক্ষা করার পর এবং আমাদের উপস্থিতিতে রড দেওয় হয়।

জানতে চাইলে মেসার্স সাহারা কনস্ট্রাকশন-ইএসবির ঠিকাদার ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম সাদী গর্বের সহিত মুঠোফোনে কালবেলাকে বলেন, আমি কোনো লুঙ্গি পড়া ঠিকাদার না। আমি রুয়েট থেকে পড়াশোনা করেছি। আমার কাজের সুনাম আছে। এলজিইডির অনুমতি বা উপস্থিতি ছাড়া আমরা কোনো রড নামাতে ও ঢালাইয়ের কাজ করতে পারি না। কাজেই রড কম দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। আমিও চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছি। প্রয়োজনে পাইলিংগুলো পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে প্রোপগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মো: ইসমাইল হোসেন কালবেলাকে বলেন, রাতের বেলা কাজ করার সুযোগে নেই। আর প্রতিদিন আমাদের একজন লোক সার্বক্ষণিক দেখাশুনা করবেন। অনুপস্থিত থাকলে বা অনিয়ম করলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন বলেও তিনি জানান।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print