ডিসেম্বর ১, ২০২৫ ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

এলজিইডির সড়ক তৈরীতে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ

হাতের টানেই উঠে আসছে সড়কের কার্পেটিং; তুলে খেলা করছে শিশুরা

জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এলজিডি কর্তৃপক্ষ। দায়িত্ব দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। কাজও শুরু হয় সড়ক সংস্কারের। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে সেই সড়কের কার্পেটিং। 

বলছিলাম নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের একটি সড়ক সংস্কারের কথা। সংস্কারকাজ শেষ না হতেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে যে কেউ হাত দিয়ে টান দিলেও কার্পেটিং উঠে আসছে।

অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে সড়কের এই দশা। স্থানীয় এলজিইডির গাফিলতির কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দায়সারাভাবে কাজ করেছেন। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কের কাজে মানহীন ও নিম্ননমানের সামগ্রী ব্যবহার। শুধু তাই নয়, বৃষ্টি চলাকালীন সময় শুধুমাত্র সড়কের জমে থাকা বৃষ্টির পানি অপসারণ করেই চলেছে পিচ ঢালাই এর কাজ। সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকির অভাবে যেনতেন ভাবে কাজের ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই এই সড়কটি ভেঙে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙকা তাদের।

উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোপালপুর পাকা সড়ক থেকে (এক্সেন হাউজ) হাসিমপুর পাকা সড়ক উন্নয়নের ৭৩০ মিটার কাজটি ৫০ লাখ ৯৪হাজার ৮৭৩ টাকা চুক্তিমূল্যে পায় পোরশা উপজেলার মতিউর রহমান নামে ঠিকাদার। পরে কাজটি কিনে মান্দা উপজেলার শহিদুল ইসলাম আর কাজটির দেখভালের দায়িত্বে ছিলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন।

সরেজমিনে ২৮শে মে বুধবার বিকেলে উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের হাসিমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় রাস্তার কার্পেটিং বিভিন্ন জায়গায় উঠানো। ছোট্ট বাচ্চাদের দেখা যায় কার্পেটিং তুলে খেলা করছে।

রাস্তার কাজের ব্যপারে জানতে চাইলে স্থানীয়রা বলেন, গত ২৫মে রবিবার থেকে রাস্তার কার্পেটিং এর কাজ করতে শুরু করে ঠিকাদার। শুরু থেকে ধুলোবালি ঠিকমতো পরিষ্কার করে নি, রাস্তায় বিটুমিনের আবরণ নেই। এর মাঝে বৃষ্টির মধ্যে সড়কটিতে নিম্নমানের কাজ হচ্ছিল। বাধা উপেক্ষা করে অফিসের লোকজনকে ম্যানেজ করে ঠিকাদার কাজ অব্যাহত রাখেন।

তারা জানান, বৃষ্টির মাঝেই চটের বস্তা দিয়ে রাস্তার পানি মুছে তারপর পিচ ঢালাই করা হয়েছে। আমরা অশিক্ষিত মানুষ হলেও জানি বৃষ্টির মধ্যে পিচ ঢালাই করলে সেটা থাকে না। কিন্তু সেটা কি কন্ট্রাক্টর আর ইঞ্জিনিয়াররা জানে না! প্রশ্নের সুরে বলেন তারা।

মটরসাইকেলে যাচ্চিলেন উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব। জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে। কতটা দুর্নীতি ও অনিয়ম হলে সড়কটির এমন পরিণত হয়। সড়কটি সংস্কারে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে কাজ করা হয়েছে, তাই হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে।’

রাস্তার কাজে তদারকির দ্বাযিত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল-আমিন বলেন, শেষ গাড়িতে মিক্সিং একটু সমস্যা হয়েছিলো। আর বৃষ্টির মধ্যে কাজ করার জন্য ১৫ মিটারের মতো সড়কে সমস্যা হয়েছে। আমি মিক্সিং সাইটে ছিলাম।

জানার জন্য ঠিকাদার শহিদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি।

এ ব্যপারে উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহিনূল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের একটু সমস্যা হয়েছে এটা শুনেছি। আর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঠিকাদারের সাথে কথা বলেছি। ঠিকাদার পুনরায় কাজ করে দিচ্ছে।

জানতে চাইলে নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, আমি বিষয়টি জানি এবং সেটা ঠিক করতে বলেছি। তবে বৃষ্টির মধ্যে কাজ করতে পারেনা জানিয়ে তিনি বলেন, কাজের কোন সমস্যা নেই। কাজ শুরুর পর বৃষ্টির কারণে একটু সমস্যা হয়েছে। ঠিকাদারকে ঠিক করে দিতে বলেছি। এছাড়া এখনও ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print