ঠেংভাঙা এলাকায় চার শতাংশ জমিসহ স্থাপনা আছে। তারা এ্যাকুয়ার করে নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু টাকা দেওয়ার কোন কথা নেই। চিকিৎসার জন্য আমার টাকার খুব প্রয়োজন। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রায় এক বছর থেকে ঘুরছি। আজও এসেছিলাম। জানি না কবে টাকা দিবে তারা।
ভূমি অধিগ্রহণের টাকা না পেয়ে নিজেকে হার্টের রোগী দাবি করে এভাবেই বলছিলেন জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি।

অভিযোগ উঠেছে দিনের পর দিন এমনকি মাসের পর মাস ঘুরানো হচ্ছে এ্যাকুয়ার করে নেওয়া সম্পত্তি ও স্থাপনার মালিকদের। সরকারি কাজ হলেও দুই সরকারি দপ্তরের নিয়মের বেড়াজালে পড়েছেন তারা। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন রয়েছেন সিদ্ধান্তহীনতায়। তবে দ্রুত সমাধান চান ভুক্তভোগী ক্ষতিগ্রস্তরা।

নওগাঁ সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সড়ক বিভাগ ১৯টি প্যাকেজে জেলার বিভিন্ন রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ করছে। এর মধ্যে একটি রাস্তা শহরের জেলখানা মোড় থেকে কীর্ত্তিপুর হয়ে বদলগাছী পর্যন্ত এক নং প্যাকেজে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটা শুরু করা হয়েছে প্রায় আড়াই বছর আগে। প্রশস্ত করণের এই কাজ করতে গিয়ে পড়ে যায় রাস্তার পাশে থাকা ব্যক্তিমালিকানা সম্পত্তি ও স্থাপনা। যেগুলো ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় একটা নির্দিষ্ট মূল্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ওই সকল সম্পত্তি ও স্থাপনার স্ব স্ব মালিকদের। কিন্তু আজও পরিশোধ করা হয়নি ভূমি অধিগ্রহণের টাকা। ফলে রাস্তার বেশির অংশ কাজ শেষ হলেও অসমাপ্ত থেকে যায় ভূমি অধিগ্রহণ এলাকার কাজ। এদিকে অসমাপ্ত এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই যেন ভোগান্তির শেষ থাকে না। হয়ে আছে খানাখন্দে ভরপুর। যার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চলাচলরত জনসাধারণের। আর ভোগান্তির কারণে সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের।

অন্যদিকে প্রায় ৬ মাস আগেই ভূমি অধিগ্রহণের টাকা জেলা প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে সড়ক বিভাগ থেকে। এবং ১০ পার্সেন্ট কেটে নেওয়ার জন্য সড়ক বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৪-৫ মাসে আগে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন এতে জমিতে থাকা স্থাপনাগুলো নিজ উদ্যোগে দ্রুত সরিয়ে নিতে বাধ্য হবে স্ব স্ব মালিকরা। আর কোন নিলামের ঝামেলা ছাড়াই টাকাগুলো সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
এছাড়া ইতিপূর্বে দেশের নীলফামারী জেলাসহ একাধিক জায়গায় এই ভাবে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
অপরদিকে জেলা প্রশাসন বলছেন সড়ক বিভাগ চিঠি দিলেও এটার বিষয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা। আর সম্পত্তির মালিকরা বলছেন যে নিয়মই থাকুক না কেন, দ্রুত বাস্তবায়ন চান তারা।
এবিষয়ে সড়ক বিভাগের কেউ সরাসরি কোন মন্তব্য করতে চায়না। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানালেন, রাস্তার কাজ শেষ করতে না পেরে তারা খুব বিব্রত অবস্থায় আছেন। ভোগান্তির কারণে অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়।
তবে দ্রুত টাকা না দেওয়ার কারণ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রশ্নের সুরে বলছেন সাধারণ জনগণের বেলায় নিয়ম ও অজুহাতের শেষ থাকে না। প্রভাবশালী লোকদের ক্ষেত্রে তাদের কাজ আগে হয়। এছাড়া এতোগুলো টাকার ইন্টারেস্ট জড়ো হচ্ছে সেই ব্যাংক হিসেবে। ইচ্ছে করলেই চেকগুলো দ্রুত দিতে পারে জেলা প্রশাসন। অথচ ১০ পার্সেন্ট জটিলতায় বন্ধ রয়েছে স্থাপনার মূল্য দেওয়া। দেওয়া হচ্ছে না সম্পত্তির মূল্যও। এমনটাই জানালেন ভুক্তভোগীরা
আব্দুর রহমান নামে এক ব্যক্তির ঠেংভাঙা মোড় এলাকায় আছে ৬ শতাংশ জমি ও স্থাপনা। এরমধ্যে শুধুমাত্র জমির মূল্য বাবদ পাবে ৩৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর স্থাপনার মূল্য বাবদ পাবে প্রায় এক কোটি টাকা। স্থাপনার মূল্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত না হলেও সম্পত্তির মূল্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী মালিকরা। তাই দুই একটা চেকও নাকি রেডি হয়েছে। তারপরও দেওয়া হচ্ছে না কোন অদৃশ্য কারণে।
আব্দুর রহমানের ছেলে ফিরোজ হোসেন বলেন, আজ প্রায় ৬ মাস এ অফিস থেকে ওই অফিসে ঘুরছি। তারা শুধুমাত্র কালক্ষেপণ করছেন। আমরা সাধারণ জনগণ হওয়ায় তাদের কাছে গুরুত্ব কম।
তিনি বলেন, সড়ক বিভাগ অনেক আগেই টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। তারা ১০ পার্সেন্ট কাটার একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সেটা নিয়মের মধ্যে না থাকলে অন্য ব্যবস্থা করা হোক। তারপরও আমাদের টাকা পরিশোধ করা হোক।
সম্পত্তিসহ স্থাপনার মূল্য পাবে মামুন নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমার ঠেংভাঙা মোড়ে ৫ শতক জমির উপর একটা মিল আছে। ৮ ধারাও শেষ হয়ে গেছে। কেন টাকা দিচ্ছেনা আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। প্রায় এক বছর আগে টাকা চলে এসেছে। প্রথমে ১০ পার্সেন্ট কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্তে বাঁধা হয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম আমাদের টাকা দিয়ে ওদের জিনিস ওরা নিয়ে যাক। সেটাও যখন করছিল না, তখন আমরা ১০ পার্সেন্ট বাদেই টাকা নিতে চেয়েছি। ভূমি অধিগ্রহণ থেকে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। জানিনা কবে সিদ্ধান্ত আসবে। ঈদের আগে একজনের চেক রেডি হয়েছিল। সেটাও দিচ্ছে না জেলা প্রশাসন থেকে।
শুধুমাত্র জমির মূল্য পাবে জিল্লুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঠেংভাঙা মোড়ে আমার ৮ শতক জমি পড়েছে।
বাড়ি করার আশায় মাটি কেটে জমি ভরাট করেছিলাম। হঠাৎ এসে আকুয়ার করে নিল তারা। অথচ টাকা দেওয়ার কথা নেই। বারবার অফিসে গিয়েও কোন লাভ হয়না। ঈদের আগে আমরা অনেকে গিয়েছিলাম, বলা হলো ঈদের পর দিবে।
তিনি বলেন, এক জায়গায় ৯ শতকের মধ্যে ৬ শতক পড়েছে। এভাবে কয়েক জায়গায় আমাদের যৌথভাবে অনেক জমি তারা নিয়ে নিয়েছে। অথচ টাকা দেওয়ার কোন নাম নেই। অনেক দিন থেকে ঘুরছি। বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গেছি।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা মুঠোফোনে বলেন, জেলা প্রশাসকের একটা নির্দিষ্ট কোডে টাকা জমা হয়। এবং টাকা পাওয়ার পর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। আর ১০ পার্সেন্ট টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, এখনও কোন সিদ্ধান্ত পাইনি। দেরি হওয়ার কোন কারণ নেই। আমাদের কাজ চলমান আছে। সম্পত্তির মূল্যর জন্য শুনানি চলছে, শেষ হলে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ভূমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
