ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ ১০:৫৪ পিএম

নিরাপদ খাদ্যঃ নিশ্চিত হবে কবে বাংলাদেশে?

খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম
খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম

সম্প্রতি সময়ে খাদ্যের নিরাপত্তা ও ভেজাল বিরোধী কার্যক্রম নিয়ে সরকারসহ সকলেই বেশ উদ্বিগ্ন। তবে সাধারণ মানুষ যা খাচ্ছে তা কি আসলেই নিরাপদ? আর নিরাপদ না হলে তার জন্য কী ব্যবস্থা আছে দেশে? আর যদি থাকেও কোন ব্যবস্থা তাহলে তার জন্য সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

প্রতিনিয়ত খাবার টেবিলে বসলে সচেতন মানুষদের প্রশ্ন করতে দেখা যায় আমরা যা খাচ্ছি তা নিরাপদ কি না। শাহরিয়ার ইসলাম নামে বগুড়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত একজন বলেন, প্রতিদিন অফিসে এসে দুপুরের খাবারের জন্য বাইরে রেস্তোরার স্মরণাপন্য হতে হয়। আর এজন্য খুজতে হয় একটু পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। তবে অনেক রেস্তোরাঁয় খাবারের মান এবং রেস্তোরাঁ সম্পর্কিত বিভিন্ন সনদ দেখে অনেকটা নিরাপদ মনে হয়। তবে আফসোসের বিষয় তাদের রান্নাঘরের পরিবেশ দেখলে কখনোই খেতে ইচ্ছে করবে না সেখানে। তারপরও অনেকটা বাধ্য হয়েই খেতে হয়।

আরো পড়ুনঃ জনসচেতনতায় পারে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুহানী বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের হোস্টেলের ক্যান্টিনেই তিনবেলা খেতে হয়। তবে মাঝে মাঝে একটু ভালো কিছু খাবারের জন্য বাইরে রেস্তোরায় যাই। খাবারের টেস্ট অনেক ভালো থাকলেও তা কতটুকু পরিষ্কার পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বা আদৌ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ কিনা তা নিয়ে সঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

প্রতিনিয়ত বাইরের খাবার খাওয়া প্রায় সকলেরই ভাষ্যমতে একই তথ্য মেলে যে তারা খাবারকে নিরাপদ মনে করছেন না।

বাংলাদেশে যেকোন ধরণের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সেটি হোক মানুষের জন্য তৈরি খাদ্য কিংবা হোক গবাদি পশু বা মাছ-মুরগির জন্য তৈরি খাদ্য। তবে সংস্থাটি এখনো পুরোদমে তাদের কার্যক্রম শুরু কর‍তে পারেনি।

বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন পাশ করে। এরপর ২০১৫ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরকারের এই সংস্থাটি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পেরেছে ২০২০ সাল থেকে।

তারপরও দীর্ঘদিন পেড়িয়ে গেলেও প্রতি জেলায় একজন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে সংস্থাটি। তবে তাদের জনবলের অনেক অভাব আছে বলে স্বীকার করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও প্রকল্প পরিচালকের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ।

তিনি বলেন, খাবারে মূলত ৩ কারণে অনিরাপদ হতে পারে। প্রথমত জীবানুবাহিত রোগের কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম রোগ তৈরি হয়। খাদ্য বাহিত ‘ই’ ভাইরাসের কারণে আমাদের শারিরীক জটিলতা তৈরি হয়। প্যারাসাইট বা কৃমিজাতীয় পরজীবি খাদ্যের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে।

এছাড়া এমন কোন রাসায়নিক যা মানব সভ্যতার সাথে জড়িত। এমন রাসায়নিক কোন কারণে যদি খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে তাতে দীর্ঘ সময় পর শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করে। কৃষি বা কীটনাশকের অতিরিক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরে রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া প্রাণীজ খাদ্য যেমন- মাছ, মাংস এবং দুধের মাধ্যমেও আমাদের শরীরে রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ অনিরাপদ খাদ্য সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে- মঞ্জুর মোর্শেদ

তিনি আরো বলেন, কারখানাগুলোতে সরকারি আইন মানা হয় না। মান নিয়ন্ত্রণ করে না। পোড়া তেল ব্যবহার করা হয়। আইনের কোন তোয়াক্কা করে না। এসকল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর আইনের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

যদি কোন খাবার অনিরাপদ মনে হয়?

ভোক্তা কোথাও খেতে গিয়ে যদি কখনো মনে করেন যে তিনি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাচ্ছেন না কিংবা খাবারে ভেজাল মেশানো হয়েছে তাহলে তৎক্ষনাৎ আমাদেরকে জানাতে পারেন। আমাদেরকে জানাতে আমাদের হট লাইন ১৬১৫৫ নম্বরে ফোন দিতে পারেন সম্পূর্ণ ফ্রি-তে। এছাড়া আমাদেরকে ইমেইল করতে পারেন কিংবা আমারা যারা দ্বায়িত্বরত আছি ওয়েবসাইট থেকে আমাদের মোবাইল নম্বরে কল করলে আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো বলে জানান বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও প্রকল্প পরিচালকের সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ।

এছাড়াও সরাসরি অভিযোগ করা যাবে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয়ে। সেখানে দ্বায়িত্বরত সহকারি পরিচালক অভিযোগ গ্রহণ করবেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

❝বাংলাদেশে খাদ্য ব্যবসা করতে এখনো পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট লাইসেন্স বা রেজিট্রেশন সিস্টেম নেই। উন্নত বিশ্বে খাদ্য ব্যবসা করতে গেলে তাদেরকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। কিন্ত আমাদের দেশে যে কেউ যেকোন মুহুর্তে সামান্য ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই খাদ্য ব্যবসায়ে নেমে যান। অথচ তাদের নেই কোন প্রশিক্ষণ নেই কোন ধরণের অভিজ্ঞতা। আমরা সেটা আইন সংশোধনের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটি করা গেলে আমাদের কাজ অনেক এগিয়ে যাবে।❞

মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ আরো বলেন, ❝খাদ্য যদি নিরাপদ না হয় তাহলে তা খাদ্য নয়। খাদ্যকে নিরাপদ হওয়া উচিত সবার আগে। কারণ খাদ্য থেকে বিরত থাকার কোন উপায় নেই। তবে খাদ্য নিয়ে আমাদের মাঝে অসচেতনতা আছে। অনিরাপদ খাদ্যের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। স্মার্ট খাদ্য গ্রহণ করতে হবে তবেই স্মার্ট নাগরিক গড়ে উঠবে।❞

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on print
Print

সম্পর্কিত