দেশের উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ক্ষ্যাত বগুড়া জেলা প্রাচীনতম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। সেই সাথে দেশের সব থেকে পুরোনো জেলা হিসেবে দেশব্যাপী অনেক সমাদৃত হয়েছে। ভারতের রাজা “অশোক” বাংলা জয় করার পর এর নাম রাখেন পুণ্ড্রবর্ধন । ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল জেলা হিসেবে যাত্রা শুরু করে বগুড়া। ২ হাজার ৯২০ বর্গ কিলোমিটার বিশিষ্ট এ জেলার জনসংখ্যা এখন পর্যন্ত ৩৪ লাখে ঠেকেছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, প্রফুল্ল চাকী, কথাসাহিত্যিক রোমেনা আফাজ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ভাষা সৈনিক গাজীউল হক, ওস্তাদ আলাউদ্দীন সরকার, কবি মহাদেব সাহা, ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, অভিনয় শিল্পী অপু বিশ্বাসের জন্ম এ বগুড়া শহরে ।
অন্য জেলাগুলো থেকে যাঁরা বগুড়ায় চাকরি করতে আসেন এবং কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন সেখানে থাকেন তাঁদের একটা বড় জনগোষ্ঠীই বগুড়ার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। এছাড়াও বগুড়ায় যাঁরা চাকরি করেন তাঁরা বেশ মজাতেই থাকেন। কারণ সেখানে সস্তায় ভাত-তরকারি পাওয়া যায়। আছে আনন্দ-বিনোদনের ব্যবস্থা ।
শহরের নেসকোর গলিতে ৮০ টাকা হলে খাসির মাংসের বিরিয়ানি পেয়ে যান। পাশেই ৪০-৫০ হলে ডিম, ভর্তা, ভাজি দিয়ে পেটপুরে খেতে পারেন। টেম্পল রোডে ৩০ টাকা দিয়ে ২টা গমের রুটি খেয়ে দিন পার করে দিতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন হোটেলে ১০০ টাকার মধ্যেই খুব ভালোভাবে খেতে পারেন।
এমন গরমের দিনে সাতমাথায় ১০ টাকাতেই চিনি, বিট লবণ মিশ্রিত শরবত খাওয়া যায়। এছাড়াও ফতেহ আলী বাজারের রাস্তার পাশে বিভিন্ন ভেষজ গুণসম্পন্ন পানি ২০ টাকাতেই পাওয়া যায় ।
এ তো গেলো খাওয়ার ফিরিস্তি। থাকার ক্ষেত্রেও রয়েছে চরম সুবিধা। সিঙ্গেল হলে জহুরুল নগর, পুরান বগুড়া, সেউজগাড়ী, সবুজবাগে মেসে থাকলে হাজার টাকা থেকে পনেরশ টাকায় ভালো একটা থাকার ব্যবস্থা হতে পারে।
বিবাহিত হলে রহমান নগর, কানছগাড়ি, কলোনী এসব এলাকায় কম খরচে সাবলেট নিয়ে ৪-৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকতে পারেন। এছাড়াও বগুড়ায় সুপেয় পানির অভাব নেই।
বগুড়ায় সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেও অনন্য এক দৃষ্টান্ত রয়েছে। ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জগতে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনটিরই অভাব নেই। আছে কম খরচেই ভালো টিউটর। এছাড়াও কোচিং সেন্টারতো আছেই। যেখানে বেশ ভালো গাইড করানো হয়।
এবার আসি বাজার-সদাইয়ের খরচে। শহরের রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার কিংবা কলোনী এলাকায় কম খরচেই ব্যাগভর্তি বাজার করতে পারেন। এছাড়াও কেউ যদি সুস্বাদু টাটকা সবজি চান সেক্ষেত্রে সুলতানগঞ্জ, বনানী বাজারে তরতাজা শাক-সবজি কৃষকের হাত থেকেই নিতে পারবেন তাও অত্যন্ত কম খরচে। শহরের অদূরে মহাস্থানগড় বাজারেও আরও বেশী ফ্যাসিলিটিস রয়েছে।
এছাড়াও কলা, পেঁপে, লেবু, শসা এসবও টাটকা এবং গাছপাকা ফল পাওয়ারও সুযোগ আছে এই বগুড়া জেলায়।
পোশাক-পরিচ্ছদ কেনার ক্ষেত্রেও রয়েছে দারুণ সুবিধা। শহরে উচ্চ-নিম্ন দু’ধরনের মার্কেট রয়েছে। শোরুম ব্যতীত আলতাফ আলী, আলামিন কমপ্লেক্স এসবে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই পোশাক পাওয়া যায়। উচ্চবিত্তদের জন্য রয়েছে শহরে বেশ কিছু শপিং সেন্টার ও নামীদামি সব ব্রান্ডের শো-শো-রুম। এছাড়াও হকার্স মার্কেট থেকে খুব স্বল্প দামে পোশাক কেনার সুবিধা তো আছেই।
বগুড়ায় চিকিৎসার জন্য রয়েছে সরকারি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, বক্ষব্যাধী হাসপাতাল। এতে রোগীরা সরকারিভাবে কম খরচে ভালো চিকিৎসা পান। এছাড়া আরও একটি বড় সুবিধা হলো বগুড়ায় রয়েছেন গরীবের ডা. সামির হোসেন মিশু যিনি প্রতি রাতে সাতমাথায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। আছেন ডা. পল্লব সেন, যিনি শুক্রবারে বিনামূল্যে চক্ষু সেবা দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি বগুড়ায় চক্ষু চিকিৎসার জন্য ১০০ টাকা ফি দিয়ে গ্রামীন জিসি চক্ষু হাসপাতাল, গাক চক্ষু হাসপাতাল থেকে পরমার্শ নিতে পারেন। বগুড়ায় মাঝে মধ্যেই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প বসানো হয় এতে রোগীরা বিনামূল্যে সেবা নিতে পারেন।
বগুড়ায় রয়েছে প্রথম আলো বন্ধুসভা, লেখক চক্র, খেলাঘর, বগুড়া থিয়েটার, রক্তদান সংগঠনসহ বেশকিছু ভালো সংগঠন যে-সব সংগঠনে যুক্ত হলে আপনি জ্ঞানীগুণী মানুষদের সাথে মিশতে পারবেন, আড্ডা দিতে পারবেন। এতে করে আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে, একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে ।
বগুড়ায় যেকোনো জিনিসের দামাদামি করা যায়। যাঁরা ভালো দামাদামি করতে পারেন তাঁরা খুব কম খরচেই যেকোনো জিনিস কম মূল্যে পেয়ে থাকেন ।
এবার আসি যাতায়াত খরচে, বগুড়ায় এখনও রিক্সায় ১০ টাকা ভাড়া আছে। মোটামুটি আধা-এক কিলো রাস্তা ১০ টাকাতেই যাওয়া যায়। রয়েছে সিএনজির ব্যবস্থা ৬-৭ কিলোমিটার রাস্তায় ২০ টাকা ভাড়া দিয়েই চলাচল করা যায়। এছাড়া একটু দূরের রাস্তার জন্য রয়েছে বাসের ব্যবস্থা ।
বোরিংনেস কাজ করলে সাতমাথা, পৌর পার্ক, জেলা পরিষদ এলাকায় ঘোরাফেরা করলেই চোখে পড়বে নানা ধরণের অনুষ্ঠান। কোথাও গান হচ্ছে আবার কোথাও নাটক। আবার বগুড়ায় তো একটার পর একটা মেলা লেগেই থাকে।
গায়ে একটু ফ্রেশ হাওয়া লাগাতে ইচ্ছে হলে পৌরপার্ক, খোকনপার্ক কিংবা মমইন ইকোপার্কে গিয়ে গা এলিয়ে বসে থাকার ব্যবস্থা আছে।
প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে সস্তায় খাবার-দাবারের জন্য সাতমাথায় নানা পদের বার্গার, রোল, পিঁয়াজু, বেগুনি, বটভাজি, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়িসহ বাহারি খাবারের পসরা সাজানো থাকে ।
ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হলে মহাস্থানগড়, খেরুয়া মসজিদ, ভাসু বিহার, শান্তাহার জংশন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, মমইন, মশলা গবেষণা কেন্দ্র, ওয়ান্ডারল্যান্ড, কচুয়াদহ, বিউটি পার্ক, ডানা পার্ক, বেতগাড়ী বাইপাসসহ নানা জায়গা রয়েছে ।
একটা মানুষের জীবন ধারণের জন্য এত সস্তা রেট আর কয়টা জেলাতেই আছে। বগুড়া যেন একটা প্যাকেজ। বগুড়ায় যাঁরা দূর থেকে গিয়ে থাকেন তাঁরা সাধ্যের মধ্যে সুখ-শান্তি খুঁজে পান বলা চলে। অন্য জেলায় একসাথে এতকিছু পাওয়া কোনো ক্রমেই সম্ভব নয় তা বুকে হাত রেখেই বলা চলে।