কলেজের টাকা আত্নসাৎ, শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ কমিটি তৈরি, কলেজের জায়গায় দোকান ঘর বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে সারিয়াকান্দির গণক পাড়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির মিল্টনের বিরুদ্ধে।
রোববার (১৭ নভেম্বর) এসকল অভিযোগ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও কলেজে তালা ঝুলিয়ে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির মিল্টনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
গত ০৫ সেপ্টেম্বর নাদির শাহ নামে এক ব্যাক্তি এসকল বিষয় উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এক অভিযোগ পত্র জমা দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির মিল্টন দীর্ঘ ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় পাচ বছর যাবৎ আওয়ামী রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে একই পদে বহাল আছেন। আর সেই ক্ষমতা বলেই অধ্যক্ষ পদপ্রার্থী অন্তত নয় জন শিক্ষককে পেছনে ফেলে মাস্টার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হবেন শর্তে পদায়ন হলেও পরবর্তীতে তিনি উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তবুও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বহাল আছেন।
দিনের পর দিন কলেজের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বাবদ কলেজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে আত্মসাৎ করেছেন নগদ ৩৮ হাজার টাকা। এছাড়া কলেজের উন্নয়ন, শিক্ষকদের টিউশন ফি বাবদ যে টাকা বরাদ্য আসে বছরে সে বরাদ্যের টাকাও গেল পাচ বছরে কোন শিক্ষক পাননি বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়।
কোন ধরনের বিজ্ঞপ্তি ও কমিটি ছাড়াই টাকার বিনিময়ে পাচ জন শিক্ষক খাইরুল বাসার, হিরা আকতার (অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার), আবু সাঈদ (ল্যাব সহকারী, পদার্থ বিজ্ঞান), খোরশেদ আলম (ল্যাব সহকারী, জীব বিজ্ঞান), মেহেদী হাসান (ল্যাব সহকারী, রসায়ন) পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
এছাড়া কলেজের এফডিআর একাউন্ট থেকে নগদ এক লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এভাবে গত পাচ বছরে অন্তত এক কোটি ৯৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এসকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির মিল্টনের সাথে যোগাযোগ করে হলে, তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং অর্থ আত্মসাতের বিষয়গুলো বর্তমান শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দেন। এছাড়া একই পদে বহাল থাকার বিষয়টি তিনি রাজনৈতিক ছত্রছাড়ায় থেকে দীর্ঘদিন পদে বহাল ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে কলেজে চাকুরিরত একাধিক শিক্ষক ও এলাকাবাসী।
গণক পাড়া কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ তদন্ত ও পর্যালোচনা করেন বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার মো: হযরত আলী। তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলেজে গিয়ে আমি তদন্ত করেছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর পক্ষে বিপক্ষের সকল তথ্য সংগ্রহ করে আঞ্চলিক পরিচালক স্যার বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর কাছে হস্তান্তর করেছি।
তবে যাবতীয় অভিযোগ পর্যালোচনা করে প্রাথমিকভাবে তিনি দোষী কি না তা জেলা শিক্ষা অফিসার মো: হযরত আলী জানাতে অস্বীকার করেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের তৎকালীন পরিচালক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি থাকাকালীন সময়ে কোন অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি আমার জানা নাই।
এ বিষয়ে বর্তমান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (কলেজ) মো: আলমাছ উদ্দিনের সাথে একাধিক বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও আশানুরূপ কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।