মে ১৭, ২০২৪ ১:২৮ পিএম

পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিন্তানের মধ্যে বৈষম্যে সহ্য করা হবেনাঃ বঙ্গবন্ধু

৫২ সালে বঙ্গবন্ধু বগুড়া সফরে আসেন

৫২ সালে বঙ্গবন্ধুর বগুড়া সফর। ছবিঃ এনসিএন
৫২ সালে বঙ্গবন্ধুর বগুড়া সফর। ছবিঃ এনসিএন

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিমলীগের সভাপতি হিসাবে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসাবে বঙ্গবন্ধু যতবারই বগুড়ায় এসেছেন ততোবারই তিনি বাংলার শোষিত মানুষের কথা বলেছেন।

১৯৫২ সালের ১৭ আগষ্ট রাত ১০টায় ঢাকা থেকে ট্রেনে বগুড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ১৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় জাতির জনক সফরসঙ্গী নিয়ে বগুড়া এসে পৌঁছান। স্টেশনে তাদের স্বাগত জানান বগুড়ার আওয়ামী মুসলীম লীগের কর্মী, নেতৃবৃন্দ। তিনি এসময় বগুড়ার আওয়ামী মুসলীম লীগের কর্মী-নেতা আলীমুদ্দিন মুক্তিয়ারের চকসুত্রাপুরস্থ বাড়িতে ওঠেন। বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে তারা বগুড়া এ্যডওয়ার্ড পার্কে একটি সভা ডাকেন। সভার সভাপতি ছিলেন আলীমুদ্দিন মোক্তার। (বিএফইউজের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সাংবাদিক জিএম সজলের দাদা আলিমুদ্দিন মোক্তার) ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বগুড়া এ্যডওয়ার্ড পার্কে (বর্তমান পৌর পার্ক) জনসভায় পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিন্তানের মধ্যে বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছিলেন। কৃষকদের বাঁচাতে দেশের স্বর্ণসূত্র পাট শিল্পকে জাতীয়করনের কথা বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বগুড়ার এ্যডওয়ার্ড পার্কে জনসভায় বলেছিলেন, “বাংলার মানুষ আর বৈষ্যমের শিকার হতে চায় না। এই সোনার দেশে মাটিতে আমার দেশের কৃষকরা গায়ের ঘাম ফেলে যে ফসল উৎপাদন করে, পশ্চিম পাকিস্তানে তা পাচার হয়ে যায়। এই বৈষম্য সহ্য করা হবেনা।”

আরো পড়ুনঃ বগুড়ায় নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর ৪৭ তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত

সেদিনের সভায় শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন বিষয় বিশেষ করে শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি উত্তরবঙ্গের শিল্প বৈষম্য নিয়ে কথা বলেন। তিনি পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ নিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং ভবিষ্যৎ কার্যবিবরণী ঠিক করে দেন। সভা থেকে ফিরে তিনি রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বাদুড়তলার আলিমুদ্দিন মোক্তারের ঘরে বসে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিটিং করেন। তখন সেখানে ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। (তথ্যসূত্র প্রমানঃ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে বগুড়ার আলিমুদ্দিনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে)।

তিনি ১৯৫২ সালে উত্তরাঞ্চল সফরে এলেই বগুড়ায় যাত্রা বিরতি করতেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিমলীগ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি শহরের আলিমুদ্দিন মোক্তারের বাড়িতে। নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাতভর মিটিং করতেন।

বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া বগুড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ৮৭ বছর বয়সের নিরলোভ মানুষ বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান ডাঃ মকবুল হোসেন এভাবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারন করলেন। সেই সময়ের একমাত্র প্রবীন এই রাজনীতিবিদ ডাঃ মকবুল হোসেন ছাড়া কোন রাজনীতিবিদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের  স্মৃতিচারন করার মত এখন বগুড়াতে জীবিত কেউ নেই।

আরো জানানঃ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ডাঃ মকবুল হোসেন জানান, তার সেই দরাজ কন্ঠের রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা আজও এই বয়সে উজ্জ্বীবিত করে। বঙ্গবন্ধু বাঙালী আর বাঙালীদের অধিকারের কথা বলতেন। ডাঃ মকবুল হোসেনের এখন অতীতের বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করতে গিয়ে বার্ধক্য জনিত কারণে খেয়াল হারিয়ে ফেলেন। ৫২ সালে বঙ্গবন্ধু বগুড়ায় এলে কামরুজ্জামান তাদের ছাত্রলীগের জেলা কমিটি গঠন করতে বলেন। ডাঃ মকবুল হোসেনসহ কয়েকজন জেলা কমিটি নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে ছাত্রলীগের কমিটির কথা জানাতে চাইলেন। সে সময় আওয়ামী মুসলিমলীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতারা তাদের বলেন, তোমরা আগে কমিটি গঠন কর। হাতে গুনে ৩ জন ছাত্র পাওয়া গেল। বগুড়ার আব্দুল হাফিজকে আহ্ববায়ক করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন ডাঃ মকবুল হোসেন, সাদেক আলী আহম্মেদ কে নিয়ে কমিটি গঠন হলো।  ডাঃ মকবুল হোসেন তখন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের (সাবেক আল এল এম এফ ডিগ্রীধারী কলেজ) ছাত্র। বঙ্গবন্ধু বগুড়ায় এলে তারা কয়েকজন নেতার সাথে দেখা কারার জন্য ঘুর ঘুর করতেন। কিন্তু দেখা বা কথা বলার মত সুযোগ করে দেয়নি কেউ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মনে ছিল বাংলার মানষের জন্য ভালবাসা। মানুষ এতো ত্যাগ স্বিকার করতে পারে কিভাবে? এই নির্লোভ মাষের কাছ থেকে তিনি শিখেছেন সততা ও দেশপ্রেম। এখন তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে একটি ভালো মাথা গোঁজার ঠাই করতে পারেননি। সেই সময়ের জরাজির্ণ বাড়িতে বসবাস। এখনও জেলা পরিষদের অফিসের দ্বিতীয় তলায় ওঠেন লঠিতে ভর করে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে আজ তারই কন্যা দেশকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছেন। কোন লাভ জাতির পিতার কন্যাকে স্পর্শ করতে পারেনি।

১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের জন্য বঙ্গবন্ধু দেশের বিভিন্ন স্থানে গনসংযোগ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসেছিলেন বগুড়ায় সফরে। ৬ দফা কি এবং কেন, তা মানুষকে বোঝাবার  জন্য। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  ১৯৬৬ সালের ৮ই এপ্রিল শুক্রবার বগুড়ার এ্যডওয়ার্ড পার্কে ৬ দফার দাবীতে জনসভা করেন। সেই জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ বগুড়ার সভাপতি কবি সাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পিতা বি এম ইলিয়াস। সে সময় বঙ্গবন্ধুর সফর সঙ্গি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক এ্যডভোকেট আব্দুর মোমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, এম.এন এ খন্দকার মুস্তাক আহমদ, এ্যডভোকেট রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাধারন সম্পাদক মরহুম এ.কে. মুজিবুর রহমান।

আরো পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে জিয়ার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বগুড়ার ৩ যুবক

১৯৬৬ সালে  বঙ্গবন্ধুর আগমনে বগুড়ার মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ উদ্দীপনা তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না বলে জানালেন বগুড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যন ডাঃ মকবুল হোসেন। সেই সময়ের একজন নেতাও নেই এখন জীবিত। একমাত্র কালের সাক্ষী প্রবীন এই আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ মকবুল হোসেন। ৬ দফার মধ্যে পূর্বপাকিস্তানের শায়ত্বশাসনের কথা মানুষকে ভাল করে মনে করে দেন।  ৬ দফা বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ এমন কথা বলতেই বগুড়ার এ্যডওয়ার্ড পার্কের হাজারো মানুষ হাত নেড়ে সমর্থন জানান এমনটি জানালে ডাঃ মকবুল হোসেন। কিভাবে বাংলার মানুষকে কোমর সোজা করে দাঁড়তে হয় তা দেখিয়ে দিলেন তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। এখন এই দেশের উন্নয়ন অন্য দেশের সাহায্যের জন্য থেমে নেই। ডাঃ মকবুল হোসেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সেদিনের স্বপ্ন আজ বাস্তব। জননেত্রীর নিরলস পরিশ্রমে দেশ আজ উন্নয়নের চুড়ায়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print