অক্টোবর ১, ২০২৫ ৩:১৫ এএম

বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে পদ দিতে টাকা দাবির অভিযোগ

ধনুট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন। ছবিঃ সংগৃহীত
ধনুট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন। ছবিঃ সংগৃহীত

বগুড়ার ধনুট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়ার কথা বলে ৪ জন পদপ্রার্থীর কাছে থেকে প্রায় লাখ টাকা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে ওই উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেল স্বপনের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী ৪ জনই বিষয়টি নিয়ে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

অভিযোগে উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছাত্রলীগ কর্মীর কাছে পদ পাওয়ার জন্য ও মিষ্টি খাওয়া বাবদ টাকা দাবি করেছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের জেলা কমিটি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়ার কথা বলে উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের সভাপতি পদপ্রার্থী মো. তানভীর আহম্মেদ সরকারের কাছে থেকে ৪৫ হাজার, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আতিকুর রহমানের কাছে থেকে ৫০ হাজার গ্রহণ করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন।

এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. কাওছার আহম্মেদের কাছে থেকে ৫০ হাজার ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. আবু হুরাইরা নাদিমের কাছে থেকে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। 

জানা গেছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ধনুট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। আর সেদিন পদপ্রত্যাশীদের থেকে জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে ইউনিয়ন কমিটি দেওয়ার জন্য অনুমোদন দেয় ধনুট উপজেলা ছাত্রলীগ। 

এরপর তা অনুমোদন দেওয়া হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। কমিটির অনুমোদন দেন ধনুট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে যারা অভিযোগ দেয় তাদের ৪ জনই উল্লেখ করে বলেন, “আবু সালেহ স্বপন তাদের বলেছেন, ‘নতুন কমিটিতে তোমাকে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক করে দেবো। আমাকে মিষ্টি বাবদ ৪০/৫০/৭০ হাজার টাকা দিও।কমিটিতে পদে আসতে গেলে এমন খরচ লাগে।”

অভিযোগকারীর মধ্যে মো. কাওছার আহম্মেদ ও আবু হুরাইরা নাদিম সেই অভিযোগ দাবি করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হয়ে আমরা টাকা দিয়ে পদ নিব না।’

তবে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আবু হুরাইরা নাদিম নর্থ ক্যাপিটাল নিউজকে জানান, ‘এমন অভিযোগ আমি করিনি, কেউ আমার নামে জাল স্বাক্ষর দিয়ে জেলা কমিটির কাছে এমন মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা।’

তবে অভিযোগটিতে আবু হুরাইরা নাদিম যে নিজেই স্বাক্ষর করেছেন তার একটি ভিডিও ” এনসিএন” এর হাতে সংরক্ষণ করা আছে।

অভিযোগে কালেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির ১নং সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহম্মেদ দাবি করেন, ‘কমিটি দেওয়ার আগে আমাকে ৪৫ হাজার টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়। জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের নামে মিষ্টি খাওয়ার টাকা দাবি করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ আবু সালেহ স্বপন। পরে আমি কিছু অগ্রিম টাকা দিয়েছি। এরপর আরও চাহিদা করে বসেন স্বপন। এরপর আমি টাকা দিতে না পারায় আরেকজনকে কমিটির সভাপতি করেছে এবং সেই কমিটিতে আমাকে ১নং সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ধনুট উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন মুঠোফোনে নর্থ ক্যাপিটাল নিউজকে জানান, ‘অভিযোগগুলো পুরোপুরি মিথ্যা। অভিযোগকারীদের মধ্যে আবু হুরাইরা নাদিম সে নিজেই জানেন না অভিযোগের বিষয়টি। অথচ তার নামে জাল স্বাক্ষর দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।’

তিনি জানান, ‘উপজেলায় দলীয় কিছু ব্যাপারে আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব ছড়ানো হচ্ছে। তারা প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে আবেগে এসব ছড়াচ্ছে। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও জানান, ‘যদি প্রমাণিত হয় যে এমন ঘটনায় আমি জড়িত তাহলে আমি স্বেচ্ছায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ থেকে সরে আসবো।’

এদিকে, কালের ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম ইসলাম বলেন, ‘এসব অভিযোগ কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে মনের ক্ষোভে বলছে তারা। কই আমি তো একটি টাকাও দেয়নি। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। লড়ায় সংগ্রামে নিয়োজিত থেকেই পদ পেয়েছি।’

কালেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নবগঠিত সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া নেওয়াজ শরীফ বলেন, ‘আমার ধারণা কমিটিতে পদ না পেয়ে এসব করা হয়েছে। আমিও তো ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছি। আমাকে এমন টাকা-পয়সার কোনও প্রস্তাব দেয়নি কেউ। আর আমাকে যে তারা অযোগ্য বলছে, আমি বগুড়া শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলাম।’

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মাহিদুল ইসলাম জয় নর্থ ক্যাপিটাল নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ফলে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাকে লিখিত কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ প্রদান করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু অভিযোগ করেছে তবে কতটুকু বিষয়টি সত্যি তা প্রমাণ হয়নি এখনও। আমরা জেলা ছাত্রলীগ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তে যদি বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এনসিএন/বিআর

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print