বেসিক ব্যাংকের মতো ভালো একটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংককে কেলেঙ্কারিময় ব্যাংকে পরিণত করার হোতা ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। তারপরও তাঁকে সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগের সুযোগ করে দিয়েছিল সরকার।
পরের আট বছর আত্মসাৎ করা অর্থে বাড়ি ও জাহাজ কিনে আরাম-আয়েশেই জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি। এ নিয়ে বারবার আদালতের তিরস্কারের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সংসদ সদস্য ও বিশেষজ্ঞদের বিরূপ সমালোচনার পর অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে আসামি হলেন তিনি।
আরো পড়ুনঃ বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির তালিকায় ৪৬ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ১০১ গ্রাহক
বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকার সময় শেখ আবদুল হাই ১১০ কোটি টাকা দিয়ে ঢাকায় দেড় বিঘার একটি বাড়ি কিনেছিলেন। একক কর্তৃত্বে নামে-বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়ে সেসব ঋণের একটি বড় অংশ ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন তিনি। সেই টাকা দিয়েই কেনা হয়েছে এই বাড়ি।
বাড়িটি কেনা হয় আবদুল হাই, তাঁর স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও ভাইয়ের নামে। ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার শহীদ সরণিতে থাকা এই বাড়ির বিক্রেতা বেস্ট হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছিল যে অবৈধভাবে ঋণ নেওয়া বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে শেখ আবদুল হাই ও তাঁর ভাই শেখ শাহরিয়ার ওরফে পান্না মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। অর্থাৎ দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে বাড়ি কেনা হলেও সেই বাড়ি কেনার জন্য টাকা দিয়েছেন ব্যাংকের অন্য গ্রাহকেরা।
বাড়ির দলিল হয় দুটি। একটি দলিল ১৮ কাঠার। এটি হয় শেখ আবদুল হাই, তাঁর স্ত্রী শেখ শিরীন আক্তার এবং ভাই শেখ শাহরিয়ার ওরফে পান্নার নামে। অন্য দলিলটি ১২ দশমিক ২৫ কাঠার। এর দলিল হয় শেখ আবদুল হাইয়ের ছেলে শেখ সাবিদ হাই অনিক ও মেয়ে শেখ রাফা হাইয়ের নামে।
আরো পড়ুনঃ ৫৮ মামলায় আসামী বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা শেখ আবদুল হাই
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই উঠে আসে বিডি পাইপস অ্যান্ড পাওয়ার, আখওয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, বাসার এন্টারপ্রাইজ, মিতুল প্রোপার্টিজ, নাইলা প্রোপার্টিজ, যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যালস, সোনার বাংলা ন্যাচারাল, মালিপুর ফ্লাওয়ার মিলস, আলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি কোম্পানি থেকে ঘুষ ঢুকেছে শেখ আবদুল হাইয়ের পরিবারের মালিকানাধীন কোম্পানিতে।
দুদকের অনুসন্ধানেই উঠে আসে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার এক বছর দুই মাস পরই শেখ আবদুল হাইয়ের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ইডেন ফিশারিজের নামে ছয়টি এবং তাঁর ভাই শেখ শাহরিয়ার ওরফে পান্নার প্রতিষ্ঠান ক্রাউন ফিশারিজের নামে কেনা হয় দুটি জাহাজ। এসব জাহাজের বাজারদর প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
সূত্র: প্রথম আলো