বগুড়া: আর দু’দিন পেরুলেই দেশজুড়ে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এই ঈদে বাড়তি আনন্দ যোগ করে নারী-পুরুষের পরনে নতুন পোশাক ও প্রসাধনীসামগ্রী। ফলে ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণীবিতানে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পণ্যবিক্রি চলছে বগুড়া শহরের বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে।
করোনার ধকল কাটিয়ে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য আবারও পুরোদমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর তাতেই যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন বগুড়ার ব্যবসায়ীরা। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের এই উৎসবে তৈরী পোশাক, শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, জুতা থেকে শুরু করে নানা বিলাসী পণ্যের ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার অনেক ভালো ব্যবসা হয়েছে। আমরা যেমনটা প্রত্যাশা করেছিলাম তার চেয়েও বেশি পণ্য বিক্রি করেছি। ঈদ উপলক্ষে আশার চেয়েও ৩০-৪০ শতাংশ বেশি ব্যবসা করতে পেরে খুশি দোকান মালিকেরা।
নিউমার্কেটে তৈরী পোশাকের দাপট
বগুড়ার ঈদে নিউমার্কেটে তৈরী পোশাকের দাপট লক্ষ্য করা গেছে। চলতি বছর পয়লা বৈশাখ ও ঈদ কাছাকাছি হওয়াতে রমজানের শুরু থেকে মার্কেটের ছোট-বড় বিপণীবিতানে বিক্রি শুরু হয়েছে। যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল দুই সপ্তাহে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না বিক্রেতারা।
গত কয়েকবছর ধরেই ঈদের পোশাক কেনাকাটায় বগুড়ার ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় দেশীয় তৈরী পোশাকের চাহিদা শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। এদিকে নিউমার্কেটের মতোই শহরের হকার্স, শেখ শরীফ উদ্দিন ও আলতাব আলী মার্কেটেরও একই অবস্থা।
শহরের পোশাকের দোকানগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রনি ক্লথ স্টোর। এই দোকানটির বর্তমান বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা তিনটি। রনি ক্লথের স্বত্ত্বাধিকারী রনি সাহা জানান, আমরা রমজানের শুরু থেকেই মোটামুটি ভালো ব্যবসা করেছি। বলতে গেলে ১০ রোজার পর ব্যবসা আরো চাঙ্গা হয়ে উঠেছিলো। ক্রেতারা পছন্দের জামাগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। এখন তো অনেক জামার স্টকই শেষ হয়ে গিয়েছে বলেও জানালেন এই ব্যবসায়ী।
ফুটপাতে জুতার জমজমাট ব্যবসা
ঈদে পোশাকের পরই জুতার চাহিদা শীর্ষে। মূলত পোশাক কেনার পর জুতার দোকানে সাধারণ ক্রেতারা ভিড় জমাতে শুরু করেন। আজ শনিবার শহরের নবাব বাড়ি রোড ও কবি নজরুল ইসলাম সড়কের জুতার দোকানগুলোতে বিকেল থেকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
ফুটপাতে জুতার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বছরজুড়েই জুতার ব্যবসা করে থাকেন। তবে ঈদে তুলনামূলক তাদের ব্যবসার গতি বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাদের জুতাগুলো সুলভমূল্যে ক্রয় করতে পারায় ক্রেতাদেরও চাহিদার শীর্ষে রয়েছে তারা। এতে অনেকসময় নামীদামী জুতার ব্রান্ডগুলোকেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে শহরের বিভিন্ন অস্থায়ী জুতার দোকানগুলো।
কবি নজরুল ইসলাম সড়কের দোকানি রানা মন্ডল বলেন, চলতি ঈদে তিনি ৩ লাখ টাকার জুতা কিনেছেন। গেল দুই সপ্তাহের বেচাকেনায় তার জুতার মজুদ প্রায়ই শেষ। ঈদের আগের দু’দিন ঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারলে আশানুরূপ লাভের মুখ দেখার কথাও জানান তিনি।
শোরুমে সববয়সী নারী-পুরুষের ভিড়
ঈদ উপলক্ষে শহরের জলেশ্বরীতলায় অভিজাত শোরুমগুলোতে সববয়সী নারী-পুরুষের ভিড় চোখে পড়বার মতো। এখানে শহরের নানাদিক থেকে মানুষেরা এসে কেনাকাটা করছেন। ঈদে পরিকল্পনা অনুযায়ী শোরুমে গিয়ে পছন্দের পণ্য কিনছেন তারা।
শনিবার ওই এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইজি, টুয়েলভ, স্পার্ক গিয়ার, গো-আপ, ফড়িং, সুলতান, শৈশব, ডিমান্ডের মতো শোরুমে ক্রেতারা ব্যাপক ভিড় করছেন। এসময় নিজেদের বাহারী রঙের পোশাকে সাজাতে ক্রেতারা পছন্দের জামা-কাপড় সংগ্রহ করছেন।
শহরের কলোনি থেকে নিজের পরিবার নিয়ে ইজির আউটলেটে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তিনি বললেন, ঈদের ছুটি পেয়েই পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে বের হয়েছেন। মূলত পণ্যগুলোর গুনগত মান ভালো হওয়ায় তিনি শোরুম থেকেই কেনাকাটা করেন।
এদিকে ইজি’র এক বিক্রয়কর্মী জানান, এবারের ঈদে তাদের বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। শুধুমাত্র ইফতারির সময়টা ব্যতীত সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকছে। এজন্য শেষের কয়েকদিন অতিরিক্ত সময়েও কাজ করতে হচ্ছে তাদের। কোনো কোনো সময় তো তারা দম ফেলার ফুসরতই পাচ্ছেন না বলে জানান ওই বিক্রয়কর্মী।
এনসিএন/এআইএ