অক্টোবর ১৮, ২০২৫ ৯:১২ এএম

বগুড়ায় মৌসুম চামড়া বিক্রেতারা পাইকারদের দরজায় মাথা ঠুকছে

বগুড়ায় মৌসুম চামড়া বিক্রেতারা পাইকারদের দরজায় মাথা ঠুকছে
বগুড়ায় মৌসুম চামড়া বিক্রেতারা পাইকারদের দরজায় মাথা ঠুকছে। ছবি: এনসিএন

সরকারের বেধে দেয়া চামড়ার দামের চেয়ে অনেক কম দামে এই পণ্য কিনছেন বগুড়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা।

বিশেষ করে নির্ধারত মূল্যের চেয়ে ছাগলের চামড়ার মূল্য কম হওয়ায় অনেককে চামড়ার আড়তে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।

বগুড়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন, গেল ৫ বছর ট্যানারি মালিকরা বগুড়ার ব্যবসায়ীদের ২৫ কোটি টাকার পণ্যের দাম পরিশোধ করেনি। সেইসাথে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের খরচ প্রতি বর্গফুটে অন্তত ২০ টাকা করে বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে কাঁচা চামড়ার দামে। এ অবস্থায় কমদামে গরুর চামড়া কিনলেও ছাগলের চামড়া কিনতে রাজিই হননি জেলার চামড়া ব্যবসায়িরা ।

এদিকে চামড়া যাতে পঁচে না যায় সেজন্য গত শনিবার ও রোববার থেকে আড়াৎদাররা লবন ব্যবহার শুরু করেছে।

ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষুদ্র এবং মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ করে শহরের থানা মোড় ও চকসূত্রাপুরে চামড়া পট্টিতে ভীড় করতে থাকেন সকাল থেকেই। বাড়তি দামের আশায় পশুর চামড়া নিয়ে হাজির হয়েছেন অনেক কোরবানীদাতাও।

কিন্তু পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। গেলে কয়েকবছর চামড়ার বাজারের এই ধ্বস থামাতে সরকার মূল্য নির্ধারন করে দিলেও একেবারেই তা মানা হচ্ছে না। দ্রুত পঁচনশীল হওয়ায় কম মূল্যেই বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হয় চামড়া। নগদ টাকায় মৌসুমী বিক্রেতারা বাড়ি বাড়ি থেকে চামড়া সংগ্রহ করে বাজারে এনে যে দাম পাচ্ছেন তাতে মুলধনও উঠছেনা বলে দাবি তাদের।

অন্যদিকে দাম অতিরিক্ত কম বলায় অনেকে ফেলে রেখে যাচ্ছেন পশুর চামড়া । লাভের আশায় কেউ কেউ ঋণ করে টাকা খাটিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

এমনকি বেলা বাড়ার সাথে সাথে চামড়ার দাম আরো কমতে দেখা গেছে জেলার একমাত্র চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের এই বাজারে। কাঁচা চামড়া দ্রুত বিক্রি না করলে চামড়ায় পঁচন ধরবে। তখন তা বিক্রি অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

মৌসুমী বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা কম দাম বলায় বাড়তি লাভের আশায় অনেক কোরবানীদাতা নিজেরাই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও উপজেলা থেকে গরু-খাসির চামড়া নিয়ে আসেন জেলা সদরে। কিন্তু তাতে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো আরো কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। আর খাসির চামড়া ৫ টাকাতেও কেনেননি ব্যবসায়ীরা। মাদ্রাসা বা এতিমখানায় দান করতে চাইলেও গ্রহণ করা হয়নি।

পাইকারী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বড় এক ট্রাক লবণযুক্ত চামড়ার ক্রয়মূল্য পরে ১০ লাখ টাকা। ট্যানারীতে নিয়ে যাবার পর মান যাচাই-বাছাইসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তার মূল্য ২ থেকে ৩ লাখে নেমে আসে।

অন্যদিকে, গেল পাঁচ বছর নানান অযুহাতে চামড়ার মূল্য পরিশোধ করেনি ট্যানারি মালিকরা। এরসাথে যুক্ত হয়েছে লবণ-প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণসহ পরিবহনের বাড়তি ভাড়া।

বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার জানান, “তারা ১ লাখ টাকা দামের উপরে গরুর চামড়া কিনেছেন ৮৮০ থেকে ১২০০ টাকায় । কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি চামড়া সংগ্রহ করেছে নির্ধারিত মূল্যের উপরে। ফলে তারা বিপাকে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজার, কেমিক্যাল-লবণের দাম, চামড়া প্রসেস করা, কারখানার শ্রমিকের খরচসহ সব কিছুর দাম বাড়ার অযুহাত দিলেও ট্যানারী মালিক আর পাইকারী ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কারণেই গেল কয়েক বছর ধরে দেশের চামড়া শিল্পের এই ধ্বস বলে মনে করছেন প্রান্তিকের বিক্রেতারা। গরুর চামড়া যেমন তেমন ছাগলের চামড়ার মূল্য তলানীতে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print