বগুড়া: পবিত্র মাহে রমজান এলেই বৃদ্ধি পায় বেশকিছু খাদ্যদ্রব্যের দাম। দেশজুড়ে এটা অনেকটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ব্যতিক্রম এবারও হয়নি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছোলা, বেগুন, শশা, লেবু, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতার মতো কাঁচা সবজিগুলোর দাম।
বগুড়া শহরের রাজা বাজার ও ফতেহ আলী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম অন্তত দ্বিগুণ বেড়েছে। সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন রমজানের সপ্তাহখানেক আগে থেকে দাম বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়া চলছিলো।
চৈত্রের গরমে সারাদিন রোজা থাকার পরে ইফতারের সময় যারা লেবুর শরবত পান করতে চান, তাদের গুনতে হবে বাড়তি টাকা। রোজার আগে যে লেবুর দাম ছিল হালিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৫ থেকে ৪০ টাকা।
রোজার শুরুতে ছোলা ও বেগুনের দাম বাড়ে সবার আগে। শহরের প্রধান বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায় গত কয়েকদিনের তুলনায় বেগুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও ভালো মানের এক কেজি বেগুন পাওয়া যেত ৪০ টাকায়। সেই বেগুন কিনতে হলে এখন ক্রেতাদের গুনতে হবে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
অন্যদিকে ছোলার দাম বেড়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। পাশাপাশি দাম বেড়ে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়, যা আগে ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা।
ফতেহ আলী বাজারে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল হোসেন (৩২)। তিনি জানালেন, ‘বাজারের প্রতিটি জিনিসের দামই বেড়ে গেছে। কাঁচা সবজি কিনতে আজ বাজারে এসেছি কিন্তু সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। এভাবে আর কিছুদিন চললে জীবনযাপনে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরী হবে।’
শহরের মধ্যে রাজাবাজার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ের বড় মোকাম। এই বাজারে মানভেদে এক কেজি শশা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পাশাপাশি খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত কাঁচা সবজি ধনেপাতার দামও উর্ধ্বমুখী। আগে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ধনেপাতা এখন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের দাম এক লাফে ৪০ টাকা বেড়ে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। যা আগে বিক্রি হতো ২০ টাকায়।
রাজাবাজারের কাঁচাপণ্যের ব্যবসায়ী তারাজুল ইসলাম বলেন, ‘তীব্র গরম ও রমজানের কারণে শশা-লেবুর আমদানিতে ঘাটতি পড়েছে। ক্রেতারা এই জিনিসগুলো কিনতে ভিড় করছে। কিন্তু দাম বেশি হওয়ার জন্য অনেকেই সবজিগুলো সংগ্রহ করতে পারছেন না। তারা অভিযোগের তীর আমাদের দিকেই ছুড়ছে। কিন্তু আমাদের এখানে করার কিছুই নেই।’
শহরের কলোনি বাজারের একটি অস্থায়ী দোকানে সাজানো আছে নানা রকমের খেজুর। বিক্রেতা সেলিম রেজা (২৮) জানালেন, ভালো মানের খেজুর বিক্রি করছেন তিনি। তার দোকানে ১০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে খেজুর পাওয়া যাচ্ছে। পণ্যের দাম একটু বেশি হলেও তিনি সৌদি আরব ও ইরানের খেজুরই বেশি বিক্রি করছেন।
থানামোড়ে কথা হয় রিকশা চালক কালামের (৪০) সাথে। তিনি বললেন, ‘সারাদিন রোজা থেকে গাড়ি চালানো খুব কষ্টকর। দিন শেষে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আসে। সেটা দিয়ে সন্তানদের পড়ালেখার খচর চালিয়ে বাজারে গিয়ে পছন্দের জিনিস কিনতে পারি না। রোজা উপলক্ষে ভালো কিছু খাবো, সেটা পারছি না।’