অক্টোবর ১৮, ২০২৫ ৮:৫৪ পিএম

হিমাগারে সংরক্ষন করে অধিক মুনাফা করার অভিযোগ

অধিক মুনাফা লাভের জন্য হিমাগারে সুপার ফুড ডিম

অধিক মুনাফা লাভের জন্য হিমাগারে সুপার ফুড ডিম
অধিক মুনাফা লাভের জন্য হিমাগারে সুপার ফুড ডিম। ছবি: এনসিএন

সুপার ফুড ডিম নিয়ে গড়ে উঠেছে এক বিরাট সিন্ডিকেট। অভিনব কায়দায় ডিম সংরক্ষণ করে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে বিরাট অংকের মুনাফা বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে এই সিন্ডিকেট। এমনটি জানালেন বগুড়া পোল্ট্রি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল আমিন লিডার।

বগুড়ার পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রতিফলন নেই। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন খামারিরা, তেমনি প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

ডিমের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এলো এগুড়া পোল্ট্রি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির নিকট থেকে উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত এলাকায় অনেক মুরগীর খামার গড়ে উঠেছে। এই সব খামারীদের নিকট থেকে ডিম সিন্ডিকেট গ্রুপ ডিম এনে হিমাগারে সংরক্ষন করে। হিমাগারের সংরক্ষিত ডিম ১৫ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়। এক মাসের অধিক সময় হিমাগারে রাখা সংরক্ষিত ডিম হিমাগার থেকে বের করলে বাজারে ৫ দিনের বেশি রাখা যায় না। ৫ দিনে মধ্যে বিক্রি না করলে ডিমের পুষ্টি গুন নষ্ট হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রহমান নগরের এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান এই সংরক্ষিত ডিম খাওয়ার উদ্দ্যেশে রান্নার জন্য ভাঙলে ডিমের ভেতরের পানি গুলো পাতলা হয়ে যাবে। ডিমের কুসুম ছড়িয়ে যাবে। অনেকে বলে থাকেন এটি কৃত্রিম ডিম। জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কিসক ডা: সাইদুর রহমান জানান, কৃত্রিম ডিম বলে কোন ডিম নেই। সংরক্ষিত ডিম হিমাগরে অধিক সময় থাকালে এর পুষ্টি গুন অনেক হ্রাস পাবে।

৫ দিনে বেশি সংরক্ষিত ডিম বাইরে আনলে সেই ডিমের মধ্যে রক্তের আভা আসবে । এই সিন্ডিকেট লক্ষ লক্ষ ডিম হিমাগারে সংরক্ষন করে থাকেন এই ডিম সিন্ডিকেট। এই কথার সাখে এম মত পোষন করে বগুড়া পোল্ট্রি ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল আমিন লিডার। তারা প্রতি ডিমে দেড় থেকে দুই টাকা মুনাফ করে থাকে। যেখানে ডিমের সংকট সেখানে তারা হিমাগারে সংরক্ষিত ডিম পাঠিয়ে দেয় ।

বগুড়া শহরের পাইকারি বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৩৪ টাকায়। যা একটু দূরে রাজাবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দরে। গেল কয়েকদিনে শহরের বিভিন্ন বাজারের চিত্র এটি।

মূলত ডিমের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে ডিম সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা । এ কারণে নায্য মূল্য না পাওয়ায় আক্ষেপ জানালেন পোল্ট্রি শিল্পের নেতা পোল্ট্রি এ্যাসোসিয়েশন নেতা।

তিনি বলেন, আমরা যারা খামারি আছি তারা কিন্তু অনেক ঝুঁকি নিয়ে ডিমগুলো উৎপাদন করছি। শ্রম, ব্যয় ও ভোক্তাদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা অর্জন করতে পারছি না। কেননা এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা আছেন যারা ডিমের কৃতিম সংকট তৈরী করে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এই খাত হুমকির মুখে পড়বে।
শহরের কাজীখানার মোড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী আলামিন শেখ। তার কথায়, ‘ডিমের দাম মূলত নির্ধারণ করা হয় ঢাকায়। ফলে জেলা শহরে যখন ডিমগুলো আসে তখন স্বাভাবিকভাবেই এই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তবে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি মধ্যস্বত্বভোগীদেরও দায়ী করেছেন।

বগুড়া শহরের বিভিন্ন খুচরা দোকানে ডিমের চাহিদা তুলনা মূলকভাবে বেশি থাকে। এই এলাকার ব্যবসায়ী রহমত বলেন, ‘গেল কয়েকসপ্তাহ ধরেই ডিমের দাম ওঠানামা করছে। আর ডিমের দাম নির্ধারণ করে পাইকারি ব্যবসায়রা। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। বেশি দামে ডিম কিনে সামান্য লাভে আমরা ডিম ভোক্তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি।

শুধু ডিমের দামই বৃদ্ধিই নয়, এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের পরও ডিম সংরক্ষণ করে তা খোলা বাজারে সরবরাহ করছেন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী। এতে ডিমের স্বাভাবিক পুষ্টি গুণ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে মানবদেহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যা সাধারণ ক্রেতাদের অগোচরে রয়ে যাচ্ছে।

ডিম সংরক্ষণের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে মানবদেহে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের কথা জানিয়ে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতলের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মোঃ শফিক আমিন কাজল বলেন, ‘ডিম মুরগীর কাছ থেকে সংগ্রহের পরপরই খাওয়া উচিত। খুব বেশি হলে তিন দিনের মধ্যেই খাওয়া ভালো। এতে করে ডিমের সর্বোচ্চ পুষ্টি গুণ পাওয়া যায়। কিন্তু ফ্রিজিং করে রাখলেও তা ১৫ দিনের বেশি রাখলে সেই গুণ ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে।

তিনি বলেন, ‘ডিম এমন একটি পণ্য যেটা জীবানুদের জন্য উৎকৃষ্ট খাবার। ডিম নির্দিষ্ট সময়ের পরও সংরক্ষণ করলে সেটি মানবদেহে নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সবার উচিত ডিম সংগ্রহের পরপর খাওয়া উচিত।

অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের পরও সংরক্ষিত এবং চড়া মূল্যে ডিম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।

এনসিএন/এআইএ/এ

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print