মে ১৭, ২০২৪ ৩:৫৯ পিএম

বেসিক ব্যাংকের ঋণখেলাপীর শীর্ষ ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠান

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

২০০৮ সালে রাষ্ট্র খাতের বেসিক ব্যাংক ৫৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল। আর ২০১৯ সালে ব্যাংকটির নিট লোকসান ৭৫৬ কোটি টাকা। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৬ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন সরকারঘনিষ্ঠ শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। এই পাঁচ বছরে পুরো ব্যাংকটিকে ডুবিয়ে দিয়েছেন তিনি। আর তাঁর অপকর্মের দায় এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বেসিক ব্যাংককে।

শিগগিরই ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াবে—এমন সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ব্যাংকটির ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, আত্মসাৎ করা অর্থ আদায়ের পরিমাণ কম। আবদুল হাইও রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

আরো পড়ুন: ঘুষের টাকায় বাচ্চুর বাড়ি ও জাহাজ

ব্যাংকটির শীর্ষ খেলাপিদের মধ্যে আমার বাড়ি গ্রুপের খেলাপি ঋণ ছিল ৫৫৭ কোটি টাকা। এ ঋণ সম্প্রতি বিশেষ সুবিধার আওতায় নিয়মিত হয়েছে। এরপর শীর্ষ খেলাপিদের মধ্যে আছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েলের ৩৫৮ কোটি টাকা, এবি গ্রুপের ২১৬ কোটি টাকা, নিউ ঢাকা সিটি ডেভেলপমেন্টের ১৯৭ কোটি টাকা, ফিয়াজ গ্রুপের ১৯৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির ১৮০ কোটি টাকা, মিমকো গ্রুপের ১৬৫ কোটি টাকা, ভাসাভি, তাহমিনা ও ওয়াটার হেভেনের ১৫৮ কোটি টাকা, ওয়েল টেক্সের ১৪৬ কোটি টাকা, আরআই এন্টারপ্রাইজের ১৩১ কোটি টাকা, রাইজিং গ্রুপের ১৩০ কোটি টাকা, ডেলটা সিস্টেমের ১২৯ কোটি টাকা, ম্যাপ অ্যান্ড মুলার গ্রুপের ১২২ কোটি টাকা, ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকিংয়ের ১২২ কোটি টাকা এবং রিজেন্ট ওয়েভিংয়ের ১১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফিয়াজ গ্রুপের ওয়াহিদুর রহমান, বেলায়েত নেভিগেশন ও রিলায়েন্স শিপিং লাইনসের গাজী বেলায়েত হোসেনসহ কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দেশে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। আবার কয়েকজন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন।

আরো পড়ুন: বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির তালিকায় ৪৬ ব্যাংক কর্মকর্তা ও ১০১ গ্রাহক

সব মিলিয়ে রাষ্ট্র খাতের সবচেয়ে ভালো ব্যাংক হিসেবে একসময়ে পরিচিতি পাওয়া বেসিক ব্যাংকের এখনো ডুবন্ত অবস্থা। এই ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের করা ১৮ মামলার কোনোটিতেই শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ব্যাংকটিতে ‘ডাকাতির’ পেছনে আবদুল হাই জড়িত বলে একাধিকবার উল্লেখ করেছিলেন। তবে এখনো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বেসিক ব্যাংক নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল হাই দায়িত্ব নেওয়ার পর ভালো এ ব্যাংকটিকে দুরবস্থায় ফেলেছেন। এ জন্য আগে তাঁকে আইনের আওতায় আনতে হবে। যত দিন তিনি আইনের বাইরে থাকবেন, তত দিন গ্রাহকেরা টাকা ফেরত দেবেন না। অথচ ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে এটা খুব জরুরি।

আরো পড়ুনঃ ৫৮ মামলায় আসামী বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির হোতা শেখ আবদুল হাই

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, ব্যাংকটির মালিকানা যেহেতু পুরোপুরি সরকারের হাতে, তাই সরকারকে ব্যাংকটি নিয়ে ভাবতে হবে। ব্যাংকটির উন্নয়নে পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। কারণ, এ রকমভাবে তো চলতে দেওয়া যায় না।

সূত্র: প্রথম আলো

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Email
Print